হার্ট ও রক্তবাহী নালীর রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ আজ ঘরে ঘরে। বহু মানুষই উচ্চ রক্তচাপ তথা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ে দিন কাটান। এর জেরে হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যুর ঘটনাও এদেশে ইদানিং যথেষ্ট ঘটছে। ডাক্তার দেখিয়েও সুফল মিলছে না অনেকেরই। কারণ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হয় ডাক্তারবাবু একগাদা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন যার খরচ বিরাট, নয়তো বলছেন জিমে গিয়ে ব্যায়ামের ট্রেনিং নিতে। এ শুধু খরচসাপেক্ষ তাই নয়, অনেকের পক্ষে, বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকেন, সম্ভবই নয়।
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও আমেরিকার মতো দেশেও একই সমস্যা। সেখানকার শতকরা ৬৫ জন মানুষই ভুগছেন হাই ব্লাড প্রেসারের রোগে। এ সংক্রান্ত অসুখে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে।
সমস্যা মেটাতে হাল ধরেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা তৈরি করেছেন Inspiratory Muscle Strength Training (IMST) নামে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের এক পদ্ধতি। এতে একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে জোরে জোরে শ্বাস নিতে হয়। যন্ত্রটি এমন ভাবে তৈরি যা শ্বাস নিতে বাধা দেয়। সেই বাধা অতিক্রম করে শ্বাস নেওয়ার কাজটাই করতে হয় IMST-তে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, এই যন্ত্র দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট ব্যবহার করতে পারলেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে দারুণ সুফল পাওয়া যায়। কমে যায় ওষুধের খরচ কিংবা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার ঝামেলা। ফলে খুশি ব্লাড প্রেসারের রোগীরা।
জার্নাল অফ দা আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে ছাপা হয়েছে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট। প্রফেসর ড্যানিয়েল ক্রেগহেডের নেতৃত্বে একদল গবেষক সেখানে তাঁদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। প্রফেসর ক্রেগহেড হলেন আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গবেষক। বিজ্ঞানীদের টিম জানিয়েছেন, তাঁদের আবিষ্কৃত এই আই এম এস টি ব্যবহার করা খুব সহজ। দিনে পাঁচ মিনিট ঘরে বসে এমনকি টিভি দেখতে দেখতেও এটি ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, এটি ব্যবহারে শুধু ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাই নয় , ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার ছ'মাস পরেও তার প্রভাব থাকছে।
জানা গেছে হার্ট ও রক্তনালীর রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৯৮০ সালেই আবিষ্কার হয়েছিল এই আই এম এস টি-র। কিন্তু তখন এর ব্যবহার ছিল কঠিন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে যন্ত্রটি নিয়ে ব্যায়াম করতে হতো। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আই এম এস টির উন্নতি ঘটিয়েছেন এবং ৩৬ জন রোগীর উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, উন্নত আই এম এস টি দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট ব্যবহার করলেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকছে। প্রকাশিত রিপোর্টে তারা দেখিয়েছেন, আই এম এস টি ধমনী পুরু হয়ে যাওয়া আটকায়। ধমনীর আকার ঠিকঠাক রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নাইট্রিক অক্সাইড যৌগটির মাত্রা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে কমে যেতে থাকে। আই এম এস টি রক্তে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে। সব মিলিয়ে এটি ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের অন্যান্য রোগ থেকে রেহাই পাওয়া এখন অনেক সহজ।
এই আই এম এস টি বেশি বয়সের মহিলাদের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। বয়স্ক মহিলা, যাঁদের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেছে, শরীরে বিশেষ কয়েকটি হরমোনের মাত্রার অদল বদল হওয়ার কারণে তাঁরা এ্যারোবিক্সের মতো ব্যায়ামের সম্পূর্ণ সুফল পান না। ফলে ব্লাড প্রেসার কমাতে এঁদের ক্ষেত্রে আইএমএসটি বিশেষ উপযোগী। রিপোর্টটিতে প্রফেসর ক্রেগহেড দেখিয়েছেন, আই এম এস টি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং শারীরিক সক্ষমতাও অনেকটা বাড়ানো যাচ্ছে।
বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে আরও গবেষণার প্রয়োজনে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ সেই কাজে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করেছে। গবেষকরা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছেন একটি অ্যাপ যার সাহায্যে বাজার থেকে কেনা যন্ত্রে আই এম এস টি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন রোগীরা। গবেষকদের আশা, খুব শিগগিরই আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই আই এম এস টি। ভারতের মানুষও আই এম এস টি ব্যবহার করে সহজেই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারবেন, এই আশা আমরাও নিশ্চয়ই করতে পারি।