আমরা অনেক সময়ই রাগের মাথায় মানুষের হিংসাত্মক মনোভাব দেখলে পশুর সঙ্গে তুলনা করে থাকি। কিন্তু কোনও মানুষের চেহারা, সত্যিই যদি 'জান্তব' হয়, তাহলে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যের। মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) নন্দেলতা (Nandleta) গ্রামে বছর সতেরোর কিশোর, ললিত পতিদার (Lalit Patidar)। তিনি ভুগছেন বিরল 'ওয়্যার উলফ' (Werewolf), ওরফে 'হাইপারট্রাইকোসিস' (Hypertrichosis) নামের এক বিরল রোগে।
কি এই ওয়্যার উলফ, বা 'হাইপারট্রাইকোসিস? চিকিৎসকদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোনও এক নির্দিষ্ট স্থান থেকে অত্যধিক অস্বাভাবিক পরিমাণে লোমের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। এর ফলে আক্রান্তের শরীর জন্তুদের মত, লোমশ হয়ে যায়। ছোট থেকে ললিতের শারীরিক নানাবিধ সমস্যা থাকলেও, এই অস্বাভাবিক লোম বৃদ্ধির লক্ষণ তখনও প্রকাশ পায়নি। কিন্তু ক্রমে শৈশব উত্তীর্ণ হয়ে, যৌবনে পা রাখবার সময়েই তাঁর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অত্যধিক পরিমাণে লোম বৃদ্ধির জন্য তাঁর শরীর ঢেকে যেতে থাকে, চেহারা হতে থাকে বিকৃত। বলা যায়, দিন দিন নেকড়ের শরীরের মত হয়ে ওঠে তাঁর শরীর। শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে তাঁকে লড়তে হয় মানসিক যন্ত্রণার বিরুদ্ধেও। কারণ তাঁর এই 'পাশবিক' রূপ, পরিচিত মহলে অসন্তোষের বীজ পুঁতেছে। তাই বন্ধুদের থেকে শারীরিক নিপীড়নও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
•কত প্রকারের হয় হাইপারট্রাইকোসিস -
হাইপারট্রাইকোসিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মগত কারণেই হয়। বংশগত কারণে হওয়ার প্রমাণও যে কম পাওয়া গেছে, তাও নয়। এটি বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা, হাইপারট্রাইকোসিস ল্যানুগিনোসা (Hypertrichosis Lanuginosa), কনজেনিটাল হাইপারট্রাইকোসিস টার্মিনালিস (Congenital Hypertrichosis Terminalis) এবং নেভয়েড হাইপারট্রাইকোসিস (Nevoid Hypertrichosis)। এছাড়াও হিরসুটিজম (Hirsutism) নামেরও এক শারীরিক সমস্যা মহিলাদের দেহে লক্ষিত হয়, যা অত্যধিক লোম বৃদ্ধির কারণ। সাধারণত স্টেরয়েডের মত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অপুষ্টি, হরমোনের তারতম্যসহ বিভিন্ন কারণেই এই রোগগুলির শিকার মানুষ হয়ে থাকেন।
•চিকিৎসা -
সেইভাবে এই রোগের কোনও যথাযথ কারণ বা প্রতিকার কিছু সম্পর্কেই বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বিভিন্ন মাধ্যমেই চলতে পারে। যেমন নিয়মিত লোম ছেঁটে দেওয়া, বৃদ্ধির আগেই নির্মূল করা, অথবা 'ওয়্যাকসিং' বা 'প্লাকিং' এর সাহায্য নেওয়া। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লোম বৃদ্ধি হোক অবশ্যই ভালো চিকিৎসক দ্বারা পরামর্শ নিয়ে, তাঁর কথা মত এগোতে হবে।
•সতর্কতা - আপনার পরিচিত মহলে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে, তাঁকে মানসিক বল দিন। খেয়াল রাখবেন কোনও মতেই তাঁর যেন মানসিক নির্যাতন না হয়। কারণ এই রোগ ভীষণ সংবেদনশীল (Sensitive)। এবং অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত ব্যবস্থা নিন।