ছবির মতো সুন্দর দেশ জাপান৷ প্রকৃতি সেখানে বিছিয়ে রেখেছে তার অনবদ্য সৌন্দর্যের ডালি৷ দেশের ছেলেমেয়েদের জীবনগুলিও যাতে সৌন্দর্যে ভরে ওঠে, সেই লক্ষ্যে জাপানে গড়ে তোলা হয়েছে চমৎকার এক শিক্ষাব্যবস্থা৷ আজ জাপানের ৯৯ শতাংশ মানুষই লিখতে–পড়তে পারেন৷ আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিতে জাপানি ছেলেমেয়েরা সবসময়ই থাকে সামনের সারিতে৷ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটিতে অপরাধের হারও অত্যন্ত কম৷
কেমন জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা? আসুন চোখ ফেরানো যাক তার বৈশিষ্ট্যগুলির দিকে৷
শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, জোর দেওয়া হয় জীবনবোধ গড়ার ওপর
জাপানে স্কুলে ১০ বছর বয়সে পৌঁছনোর আগে ছাত্রছাত্রীদের কোনও বড় পরীক্ষা নেওয়া হয় না৷ ছেলেমেয়েদের ওপর জ্ঞানের বোঝা চাপানো নয়, স্কুলের প্রথম তিন বছরে শিক্ষকদের লক্ষ্য থাকে চরিত্র গঠনে জোর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদব–কায়দা শেখানো৷
উদার ও সহানুভূতিশীল হতে শেখানো হয় ছেলেমেয়েদের
শুধু অন্যদের সম্মান করাই নয়, পশু–পাখি ও প্রকৃতির প্রতিও সদয় হতে শেখানো হয় স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েদের৷ শেখানো হয় উদার ও সহানুভূতিশীল হতে, অন্যের প্রতি ক্ষমাশীল হতে৷ পাশাপাশি আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষাও পায় তারা৷
নিজেদের কাজ করতে হয় নিজেদেরই
জাপানে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই ক্লাসঘর, স্কুলচত্বর এমনকি শৌচাগার পর্যন্ত পরিষ্কার করে নিজের হাতে৷ ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজগুলি করে তারা৷ এতে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখার পাশাপাশি, কোনও কাজই যে ছোট নয়, সেই শিক্ষাও তারা ছোট থেকেই পায়৷
একসঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খান শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা
ছেলেমেয়েরা যাতে স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ খাবার পায়, সেদিকে কড়া নজর রয়েছে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার৷ পাশাপাশি এখানে রয়েছে ব্যতিক্রমী এক ব্যবস্থা৷ দুপুরে খাওয়ার সময় ক্লাসের সমস্ত ছেলেমেয়েই শুধু নয়, তাদের শিক্ষকরাও একসঙ্গে বসে খান৷ এতে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে আরও ঘনিষ্ঠ৷ স্কুলে যেন পাওয়া যায় নিজের ঘরের উত্তাপ৷
সকলের জন্য স্কুলের বিশেষ পোশাক পরা বাধ্যতামূলক
স্কুল–ইউনিফর্ম ছেলেমেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক৷ এমনকি ক্লাসঘরে ঢোকার আগে বাইরের জুতো ছেড়ে ঘরে পরার যে জুতোয় পা গলায় ছেলেমেয়েরা, সেগুলিও একই রকম৷ এতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদের মনোভাব মুছে যায়, একত্ববোধ জাগে৷
সম্পত্তি ১৫০ কোটির, নাম ফোর্বস-এর ১০০ ধনী ভারতীয়র তালিকায়
কেন এমন হল? একসময় ভারতের অন্যতম তারকা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে, ক্রমান্বয়ে তাঁর ব্যবসা ও সাম্রাজ্যের মুখ থুবড়ে পড়ার আসল কারণটা কি?
স্কুলের আগে–পরে রয়েছে আরও অনেক কার্যকলাপ
জাপানে পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা কেউ স্পোর্টস ক্লাব, কেউ অন্য ধরনের কোনও ক্লাবে যুক্ত থাকে৷ স্কুলে আসার আগে বা স্কুল শেষ হওয়ার পরে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে সেখানে যোগ দেয় তারা৷ এই অভ্যাসের ফলে পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটার পাশাপাশি পরিশ্রম করার শিক্ষা মেলে জাপানের ছেলেমেয়েদের৷
পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা শেখে ক্যালিগ্রাফি ও কবিতা লেখা
জাপান বিখ্যাত তার শৈল্পিক হস্তলিপি ও ছোট্ট কবিতা ‘হাইকু’র জন্য৷ ছেলেমেয়েরা কালিতে তুলি ডুবিয়ে ছোট থেকেই ক্যালিগ্রাফি করতে শেখে৷ পাশাপাশি শেখে সহজ ভাষায় লেখা গভীর ভাবের কবিতা হাইকু লিখতে, যা সেদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷
এইভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দেশ জাপান আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানের সঙ্গে তার প্রাচীন ঐতিহ্যকে মিলিয়ে–মিশিয়ে জন্ম দিয়েছে উন্নত এক শিক্ষাব্যবস্থার, যেখানে ‘পুঁথিপড়া পণ্ডিত’ নয়, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার শিক্ষা পায় ছেলেমেয়েরা৷ গোটা বিশ্বের চোখে তাই জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার স্থান অনেক উঁচুতে।