কেবল নিজের মধ্যে ডুবে থাকা, আত্মপ্রেম তথা নার্সিসিজমের (narcissism) বাড়াবাড়ি আজকাল অনেকের মধ্যেই দেখা যায়৷ বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেকেই আজকাল নিজেকে নিয়ে সর্বক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকে৷ এর জন্য হামেশাই তাদের চারপাশের মানুষের বিরক্তি, সমালোচনার মুখে পড়তে হয়৷ নার্সিসিজমকে একটা বদভ্যাস হিসাবেই দেখা হয় সমাজে৷ অতিরিক্ত আত্মপ্রেম বাস্তবিকই ভালো জিনিস নয়৷ কিন্তু ইংল্যান্ডের একদল গবেষক সম্প্রতি দেখিয়েছেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে নার্সিসিজমের উপকারিতাও রয়েছে৷
অ্যান্ড্রিউ ডেনোভানের (Andrew Denovan) নেতৃত্বে একদল গবেষকের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট গত মাসে প্রকাশিত হয়েছে ‘লার্নিং অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল ডিফারেন্সেস’ পত্রিকায়৷ রিপোর্টটিতে দেখানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, যারা একটু বেশি আত্মপ্রেমী এবং মনের জোরও যাদের একটু বেশি, ভালো রেজাল্টের জন্য পড়াশোনার সঠিক কৌশল ব্যবহারে তারা অন্যদের তুলনায় দক্ষ হয়৷
মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে গিয়ে গবেষকরা যে তিনটে বৈশিষ্ট্যকে ‘ডার্ক ট্রায়াড’ বা ‘অন্ধকার ত্রয়ী’ হিসাবে চিহ্ণিত করেছেন, সেগুলো হল– নার্সিসিজম, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম ও সাইকোপ্যাথি৷ ব্যক্তিত্ব সংক্রান্ত বিজ্ঞানে বলা হয়, নার্সিসিস্টরা নিজেদের অত্যধিক গুরুত্ব দেন, চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী হন৷ অন্যদের ওপর খবরদারি করারও স্বভাব থাকে তাঁদের৷ ডেনোভান ও তাঁর সহযোগীরা অনুমান করেছিলেন, যাঁরা একটু বেশি মাত্রায় আত্মপ্রেমী হন, অন্যদের ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছায় পরীক্ষায় ভালো ফল করার লক্ষ্যে পড়াশোনায় মনপ্রাণ ঢেলে দেওয়ার প্রবণতা হয়ত তাঁদের বেশি হবে৷ এই অনুমান সঠিক কিনা বুঝতে ইউ কে–র স্নাতক স্তরের একশো জন ছাত্রছাত্রীর ওপর তাঁরা দুটি পরীক্ষা চালান৷ একটি পরীক্ষা নেওয়া হয় শিক্ষাবর্ষের শুরুতে, অপরটি নেওয়া হয় এর তিন মাস পরে৷
ছাত্রছাত্রীদের দু’দফায় কিছু প্রশ্ণের উত্তর দিতে বলেন গবেষকরা৷ প্রশ্ণগুলির মাধ্যমে অবসাদের লক্ষণ, মনের জোর ও পড়াশোনা করার কৌশল এ বিষয়গুলি সম্পর্কে গভীরে বোঝার চেষ্টা চালানো হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে যে উত্তরগুলি আসে, সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সেগুলিকে বিশদ ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়৷ গবেষকরা বুঝতে পারেন, ‘অন্ধকার ত্রয়ী’–র মধ্যে একমাত্র আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজম বৈশিষ্ট্যটিরই কেবল একটা ভালো দিক রয়েছে৷ দু’বারেই পরীক্ষাতেই তাঁরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, বিষয়ের গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করতে সাহায্য করে আত্মপ্রেম৷ পাশাপাশি, ডিপ্রেশনের সঙ্গেও রয়েছে তার বিপরীত সম্পর্ক৷ অর্থাৎ, নার্সিসিস্ট ছেলেমেয়েরা সহজে অবসাদের শিকার হয়ে পড়েন না৷ ডেনোভেন ও তাঁর সহকর্মীরা রিপোর্টে সিদ্ধান্ত করেছেন, নার্সিসিস্টদের মনের জোর বেশি থাকায়, লক্ষ্যে পৌঁছতে তাঁরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে চলেন৷ মনের এই বৈশিষ্ট্য আত্মপ্রেমীদের সাফল্যের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা করতে এবং নিজেদের পরিকল্পনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করে৷
গবেষকরা দেখিয়েছেন, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম ও সাইকোপ্যাথি– অন্ধকার ত্রয়ীর এই দুটি বৈশিষ্ট্যের কিন্তু এমন গুণ নেই৷ তবে মানব–মনের এই তিনটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে, জীবনের নানা ক্ষেত্রে এগুলির প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষার অবকাশ রয়েছে বলে ডেনোভান ও তাঁর সহযোগী বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন৷