উত্তরপ্রদেশে আবারও ধর্মান্ধদের তাণ্ডব। প্রেমিকা হিন্দু এবং প্রেমিক মুসলমান হওয়ার ‘অপরাধে’ জনসমক্ষে যুবককে নিগ্রহ করল এক হিন্দুত্ববাদী দক্ষিনপন্থী সংগঠনের কর্মীরা। যুবতীকে দিয়ে জোর করে জুতো মারানো হল যুবকের মুখে। তোলা হল সেই কর্মকাণ্ডের ভিডিও।
শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে উত্তর প্রদেশের মিরাটে। সেখানের এক ব্যস্ত বাজারে গাছের তলায় বসে ছিলেন ভিন-ধর্মাবলম্বী যুগল। ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে স্থানীয় এক দোকানদার খবর দেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামক এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সংগঠনের ১১ জন কর্মী ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। যুগলের নাম জানতে চায় তারা। যুবকটি মুসলমান এবং যুবতীটি হিন্দু, একথা জানতে পেরেই তারা আক্রমণ করে যুবকের উপর। প্রথমে তারা যুবককে প্রচণ্ড মারধোর করে। এরপরই যুবতীকে পায়ের জুতো খুলে যুবকের গালে মারতে আদেশ দেয় ধর্মরক্ষকেরা। উল্লেখ্য, সমস্ত কর্মকাণ্ডই তারা ভিডিওবন্দী করছিল।
এরপরে আরও প্রায় আধ-ঘণ্টা ধরে চলে যুবকের উপর অত্যাচার। কখনো কান ধরিয়ে বা কখনো নীলডাউন করিয়ে যুবককে নিগ্রহ করতে থাকে তারা। এরপর টানতে টানতে যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সেখানে গিয়ে তারা অভিযোগ করে, যুবক জোর করে ধর্মান্তরিত করতে চায় যুবতীটিকে।
তবে সে মুহূর্তে থানায় উপস্থিত ছিলেন যুবতীও। তিনি হিন্দুত্ববাদীদের দাবীর বিপক্ষে গিয়ে অভিযোগ করেন, যুবকটি তাঁর সাথে কোনও খারাপ আচরণ করেননি এবং তিনি স্বেচ্ছায় যুবকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের কর্মীরা তাদের তরফ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা করে। যদিও তাদের সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে থানায়।
এবিষয়ে স্থানীয় পুলিশের সার্কেল অফিসার দেবেশ সিং সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অভিযোগকারীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়ো ছিল। যুবতী স্বীকার করেছেন, তিনি নিজের ইচ্ছায় যুবকের সাথে থাকেন। আমরা অভিযুক্ত সংগঠনের প্রধান এবং বাকি কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছি”।
শনিবার রাত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অশান্তি পাকানো, শারীরিক নিগ্রহ করা সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্তরা এখনও অধরা। যদিও সংগঠনের প্রধান, সচিন শিরোহির কথায়, তাঁরা কোনও অন্যায় করেননি। তাঁরা শুধু সমাজবিরোধীদের পরিবেশকে নষ্ট করার থেকে বিরত করেছেন।