ত্রিপুরার মাটিতে প্রথম জনসভা। আর সেখানেই সভামঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধঘোষণা করে দিলেন তৃণমূলের যুবরাজ। নিজের আগ্রাসী বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দিলেন, এই দল কংগ্রেস বা সিপিএম নয়। দলের নাম তৃণমূল। আর তারা কোনোভাবেই ত্রিপুরার এক ইঞ্চি জমিও বিজেপিকে ছাড়বে না। ‘যত কাটবেন তত বাড়বে। যত আঘাত করবেন, আমাদের কর্মীদের মনোবল তত বাড়বে’- এমনই সুর শোনা গেল এদিন অভিষেকের গলায়।
আজকের সভামঞ্চ থেকে ত্রিপুরাবাসীকে উদ্দেশ্য করে অভিষেক জানালেন, তাঁদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। ডিসেম্বরেই আসছেন জননেত্রী। সাথে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে (পড়ুন বিপ্লব দেব’কে) খোঁচা দিয়ে তিনি বললেন, ‘সামনে পুরোভোট। আবার আপনি গায়ের জোরে ভোট করবেন। আপনি বলছেন, যে ভাবেই হোক আমার রাজত্ব কায়েম রাখব। এতদিন পেরেছেন, আর পারবেন না। কারন এতদিন আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিল কংগ্রেস এবং সিপিএম। তৃণমূল শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়বে। আবার আপনার সামনে তৃণমূল। আর পারবেন না। নভেম্বরে আরও দু-তিন’বার। ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেকানন্দ ময়দানে মিটিং করবেন’।
এদিন তাঁর আগ্রাসনী ভাষণে বলতে শোনা যায়, ‘আজ খুঁটিপুজো করলাম। ২৩-এ বিসর্জন। আপনাদের ১০ গুণ জেদ আমার। আপনার জেদ, গায়ের জোরে ত্রিপুরায় গুন্ডারাজ চালাব। আমার জেদ, ত্রিপুরার মানুষের সমর্থন নিয়ে ত্রিপুরায় ‘মানুষের দুয়ারে সরকার’ চালাব’। তাঁর কথায়, এতদিন দিল্লি ত্রিপুরাকে চালিয়েছে। তবে আগামী দিনে ত্রিপুরা দিল্লিকে চালাবে। ত্রিপুরাবাসীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, ‘যেদিন ভোট দিতে যাবেন, এক ভোটে বিজেপিকে উপড়ে ফেলবেন’।
সে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি এদিন। সভামঞ্চ থেকে বিপ্লব দেবকে উদ্দেশ্য করে তাঁর হুঙ্কার, ‘একটা বসে আছে বিজেপির উন্মাদ। বিপ্লব দেবের ছুটি হয়ে গেছে। বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী টো দূর, আপনার একটা ক্লাবের সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা নেই, একটা ওয়ার্ড কাউন্সিলার হওয়ার যোগ্যতা নেই। আপনি আইন-আদালত মানেন না। আপনি বিন-তুঘলকের মতো আচরন করছেন। কোটি কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটাও চাকরি দিতে পারেননি’। এরপর বিপ্লব দেবকে ‘বিগ-ফ্লপ-দেব’ বলেও সম্বোধন করলেন তিনি। তাঁর কথায়, বিজেপি না হারলে ত্রিপুরা আফগানিস্তান হয়ে যাবে। যদিও ত্রিপুরা পুলিশের উদ্দেশ্যে এদিন অভিষেকের গলায় শোনা গেল সহানুভূতির সুর। তিনি বললেন, ‘আমি পুলিশ প্রশাসনকে দোষ দিই না। এদের উপরেও প্রশাসনের চাপ রয়েছে। ওদেরও চাকরি বাঁচাতে হয়। আমি শুধু ওঁদের বলব যে, কাজই করুন। মনে রাখবেন, আপনার কাঁধে অশোকস্তম্ভের চিহ্ন আছে, পদ্মফুলের নয়’।
আজকের সভায় করোনা ভাইরাসের সাথে বিজেপির তুলনা টেনে তিনি বললেন, করোনার থেকেও বিপজ্জনক ভাইরাস হল বিজেপি ভাইরাস। এর একটাই ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিনের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডবল ডোজ দিতে হবে। একটা নভেম্বরের পুরভোটে। আরেকটা ২০২৩ সালে।
তার উপর ত্রিপুরা থেকে এদিন তৃণমূলে ঘর-ওয়াপাসি করলেন বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সাথে যোগ দিলেন সে রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক আশিস দাসও। ত্রিপুরায় ভোটযুদ্ধ আসন্ন। আর আজকের জনসভায় সেই যুদ্ধেরই বাঁশি বাজিয়ে দিলেন অভিষেক।