লোকচক্ষুর আড়ালে এদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া ২৪৮ টি প্রত্নবস্তু আবার ভারতের হাতে তুলে দিল আমেরিকা। ইতিহাস বলছে, এতো বেশি সংখ্যায় চুরি যাওয়া পুরাতাত্ত্বিক দ্রব্য একসাথে এদেশে আসার ঘটনা এককথায় নজিরবিহীন। ফেরত আসা প্রত্নবস্তুগুলির মধ্যে ১৩ টি চুরি হয়েছিল কেবলমাত্র তামিলনাড়ুর মন্দির থেকেই। উল্লেখ্য, সেগুলির মধ্যে ১৯৭১ সালে কৈলাসনাথ মন্দির থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া ১০ম শতাব্দীর নটরাজের ব্রোঞ্জ মূর্তিটিও আছে।
আন্তর্জাতিক আঙিনায় বহুদিন ধরে চলে আসছে পুরাতাত্ত্বিক শিল্পকার্য গোপনে হস্তান্তরের ঘটনা। তবে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরে, সে দেশের কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে চুরি যাওয়া ১৫৭ টি প্রত্নবস্তু ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করে। তবে এবার তারা কথাই শুধু রাখল না, উল্টে আরও ৯১ টি প্রত্নবস্তু ফেরত পাঠাল এ রাজ্যে। সূত্রের খবর, এই কাজ সম্পন্ন করতে নিউইয়র্কের ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি কলোনেল ম্যাথু বোগদ্যানোস্যান্ড এবং তাঁর সহকারী দল অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পুরো প্রক্রিয়ায় তাঁদের সাহায্য করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কলা বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষক অপ্সরা আইয়ার। জানা গিয়েছে, তাঁদের এই দলে ছিলেন আরকিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞরাও।
এবিষয়ে শিল্প উৎসাহী এবং বাইরের দেশ থেকে ভারতে প্রত্নবস্তু ফেরত আনার সংগঠন ‘ইন্ডিয়া প্রাইড প্রোজেক্ট’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এস বিজয় কুমার জানিয়েছেন, ইতিহাসে প্রথমবার বাইরের দেশ থেকে এতো মাত্রায় প্রত্নবস্তু এদেশে ফেরত এল। ভারতের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ভারতের কম্পট্রলার এবং অডিটর জেনারেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭২ সাল থেকে ২০০০-এর মধ্যে ভারতবর্ষে ফেরত আসা প্রত্নবস্তুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯ টি। এই মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় ৩০০ টি চুরি যাওয়া প্রত্নবস্তু ফেরত এসেছে ভারতে। তাঁর কথায়, আগামী বছরে আরও প্রায় ৭০০ টি চুরি যাওয়া প্রত্নবস্তু খুঁজে বের করবেন তাঁরা। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং সিঙ্গাপুরে ভারত থেকে চুরি যাওয়া বহু প্রাচীন মূর্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইতিহাস বলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঐতিহাসিক মূর্তি এবং প্রত্নবস্তু চুরি করে আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাজারে পাচার করতেন সুভাষ কাপুর নামক জনৈক ব্যক্তি। এজন্য তিনি নিউইয়র্ক শহরের তাঁর ‘আর্ট অফ দ্যা পাস্ট গ্যালারি’ ব্যবহার করতেন। সেখানেই তল্লাশি চালিয়ে (অপারেশন হিডেন আইডল) ২৬২২ টি প্রত্নবস্তু বাজেয়াপ্ত করে তদন্তকারী সংস্থা ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস। যার তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল ৮৫০ কোটি টাকারও বেশি। প্রত্নবস্তুর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ভারতবর্ষ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের।