"কল্পনার বেহেস্তের লোভে মাথা ঠুকতে ঠুকতে কালো দাগ বানিয়ে ফেলেছে কপালে" টিপ-কাণ্ডে সরব তসলিমা
সোশ্যাল মিডিয়ায় টিপ-কাণ্ডে প্রতিবাদের ঝড়, মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী রফিয়াত রশিদ মিথিলাও
সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের (Bangladesh) একটি ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) রীতিমতো ভাইরাল। ইতিমধ্যেই কেবল বাংলাদেশ নয়, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বহু মানুষ এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন। মহিলাদের পাশাপাশি মুখ খুলেছেন পুরুষেরাও। এবার এই ঘটনায় নেটমাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।
দিন দুয়েক আগের ঘটনা। বাংলাদেশের তেজগাঁও কলেজের 'থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ' বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার (Lata Samadder) সকাল বেলা কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। সেই সময়ই কলেজ থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ সদস্য লতা সমাদ্দারের মাথার টিপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি প্রতিবাদ জানান। তাতে পাল্টা তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। গোটা ঘটনায় তিনি সরব হয়েছেন। বাংলাদেশের শেরে বাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নারী স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাংশ। আর সেই ঘটনায় রীতিমতো কড়া ভাষায় জবাব দিলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
লেখিকা তসলিমা নাসরিন সামাজিক মাধ্যমে বরাবরই সক্রিয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি রাখঢাক না রেখে নিজের মতামত প্রকাশ করেন। নিজের দেশ থেকেই তিনি বহিষ্কৃত। তারপরও বাংলাদেশের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বরাবরই কথা বলেন। তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে বলেছেন, "টিপ টিপ টিপ। মেয়েরা কত রকম ভাবে সাজতে পারে। বেচারা ছেলেদের সাজগোজের বেশি কিছু নেই। নানা রকম অলংকার, শাড়ি মিনিস্কার্ট হাইহিল, এমন কী টিপটাও পরতে পারে না।" তারপরেই নারীদের ইসলাম ধর্মাবলম্বী পুরুষদের উদ্দেশ্যে কিছুটা ব্যঙ্গের ছলে বলেছেন, "মুসলমান পুরুষেরা তো কল্পনার ঈশ্বরের উদ্দেশে কল্পনার বেহেস্তের লোভে মাথা ঠুকতে ঠুকতে কালো দাগ বানিয়ে ফেলেছে কপালে। ওটিই তাদের কালো টিপ।"
অনেক নারীবাদী সমালোচক মহিলাদের সিঁথিতে সিঁদুরের টিপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই সিঁদুরের টিপ পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতীক বলতেও ছাড়েন না তাঁরা। কিন্তু একজন নারী স্ব-ইচ্ছায় মাথায় টিপ পরতেই পারেন। নিজেদের দৈনিক সাজ-পোশাকে টিপের বহর থাকতেই পারে। তা নিয়ে একজন প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বের এমন কুরুচিকর মন্তব্য, পাশাপাশি জোরাল হুমকি তো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি বিরূপ মনোভাবকেই প্রকাশ করে, বলছেন ওয়াকিবহাল মহল। এই প্রসঙ্গে লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, "পরহেজগার পুলিশ টিপ একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। তিনি মনে করেন, টিপ জিনিসটা ইসলামবিরোধী। লোকটি এই দেশে ইসলামবিরোধী কিছুই ঘটতে দেবেন না বলে পণ করেছেন।"
গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী রফিয়াত রশিদ মিথিলাও (Rafiath Rashid Mithila)। এইভাবে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। বলেছেন, "আমার টিপ নিয়ে কোন কথা নয় আমার স্বাধীনতা নিয়ে কোন কথা নয় যদি থাকে আমার আগুনে নিশ্চিহ্ন হবার ভয় পৃথিবীটা তোমার একার নয়!"
পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে বরাবরই প্রতিবাদ করে আসছেন একদল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। কেবল নারী নয়, বহু পুরুষও এই প্রতিবাদে সামিল। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা কি কেবল পুরুষতন্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি এর গভীরে আছে সংখ্যালঘু নিধনের দুষ্টচক্র? এর উত্তর জানা নেই, তবে গোটা ঘটনায় তুঙ্গে বিতর্ক!