বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে 'কৃষক ছাউনি', অভিনব উদ্যোগ বাংলাদেশের
ভারতে প্রতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যু হয় সহস্রাধিক কৃষকের, উদাসীন সরকার
মরশুমের শুরুতে সামান্য বৃষ্টিতে ডুবল কলকাতা। কলকাতার একাধিক জায়গা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জল থইথই অবস্থা। তার মধ্যে রাজভবনের সামনে অফিস থেকে ফেরার পথে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। মুর্শিদাবাদের ১ জন, পূর্ব বর্ধমানের ২ জন এবং হাওড়ার ২ জনের বজ্রপাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতে বজ্রপাতের কারণে প্রতিবছর সহস্রাধিক মানুষ মারা যান। এনসিআরবি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বজ্রপাতে ৪২৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল ১, ২০১৯ থেকে আগস্ট ৩১, ২০২০ সালের মধ্যে ১৭৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতের কারণে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই মৃত্যুহারের মাত্র ৪ শতাংশ শহরাঞ্চলের, বাকি গ্রামাঞ্চলের মানুষ। গ্রামাঞ্চলে কৃষি কাজের সময় অধিকাংশ মানুষের বজ্রপাতের কারণে মৃত্যু হয়, অথচ ভারত সরকার বজ্রপাতের ফলে মৃত্যুকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আওতায় এখনও আনেনি। ভারতের কেবল কেরালা, ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খন্ড সরকার বজ্রপাতের ফলে মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আওতায় এনেছে।
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও প্রতিবছর বজ্রপাতের ফলে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। মাঠে কাজ করার সময় কোন নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলো ঘটে। মানুষের এই করুণ পরিণতির কথা চিন্তা করে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ কৃষি বিভাগ এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। উপজেলার কৃষি অধিকর্তার সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদের উদ্যোগে দুর্গম ও জনবসতিহীন এলাকায় 'কৃষকের ছাউনি' নামে আশ্রয়স্থল তৈরি করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে কাজের সময় হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি হলে নিরাপদ আশ্রয় স্থান পেতে এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে। কেবল কৃষকের ছাউনি তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি, ছাউনির পাশে বজ্রপাত রুখতে আর্থিং লোহার দন্ড বসানো হয়েছে। কৃষকের তৃষ্ণা মেটাতে বসানো হয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। তিনটি কৃষক ছাউনি তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা।
গত এক বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৩০ জনের। জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে উপকূলবর্তী এলাকায় এই ঘটনা বেশি দেখা যায়। কৃষি অধিকর্তা দুর্গম এলাকায় কাজ করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন ঝড় বৃষ্টির সময় কৃষকরা নিরাপদ আশ্রয়ের না পেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বজ্রপাতে প্রাণ হারান। বাস কিংবা ট্রেনযাত্রীদের বিশ্রামাগারের কথা চিন্তা করে কৃষকদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন এমন কৃষক ছাউনি। কৃষিকর্তার এই উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া তৈরি হয়েছে। সর্বত্র এমন কৃষক ছাউনির দাবি তুলেছেন একাংশ।