ক্ষমতায় আসার আগে তালিবানের দাবী ছিল, এ তালিবান সে তালিবান নয়। এরা মানবাধিকারের কথা ভাবে, নারীসুরক্ষার কথা ভাবে। তবে ক্ষমতায় আসার একমাসের মধ্যেই ফের সুর বদল তালিবান। কুড়ি বছর আগে যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই আবার ‘শাসনের’ শুরু করল তালিবান সরকার পার্ট ২.০। সম্পূর্ণ মহিলাহীন তালিবান সরকারের নবনির্বাচিত মুখপাত্র জাখরুল্লা হাসিমি মহিলাদের অধিকার প্রসঙ্গে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানালেন, আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভায় মহিলাদের ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা শুন্য।
বৃহস্পতিবার এক আফগান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিমি বলেন, ‘মন্ত্রিত্ব করা নয়, সন্তানের জন্ম দেওয়াই মহিলাদের কাজ’। এর প্রত্যুত্তরে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এতে অসুবিধা কোথায়? জবাবে তালিবান মুখপাত্রের বক্তব্য, “আপনি কি তাঁদের ঘাড়ে এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দেবেন, যার ভার তাঁরা বইতে পারবেন না? মন্ত্রিত্ব করা মহিলাদের কাজ নয়। তাই আমরা কোনও মহিলাকে মন্ত্রী করিনি”।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে মহিলা জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। কিছুদিন আগেও সমস্ত ধরনের কাজে সমানাধিকার ছিল তাঁদের। তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একে একে তাঁদের অধিকার খর্ব হতে শুরু করেছে। তালিবান প্রতিষ্ঠিত নয়া মন্ত্রিসভায় একজন মহিলাও ঠাঁই পাননি। আফগানিস্থানের মহিলা জনসংখ্যা নিয়ে হাসিমির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তাঁর সাফ কথা, আমরা তাঁদের অর্ধেক মনে করি না। গত ২০ বছরে আমেরিকার মদতে গড়া সরকার মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়ার নামে পতিতাবৃত্তি চালু করেছিল। আমরা তা হতে দেব না। অথচ, এরাই সরকার গঠনের পূর্বে দাবী করেছিল, শরিয়তি আইনের পরিধির মধ্যে থেকে কোনও মহিলা প্রশাসনে অংশগ্রহন করতে চাইলে তাঁদের স্বাগত জানানো হবে।
বর্তমানে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে মহিলাদের অবস্থা শোচনীয়। তাঁদের উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চরমে উঠেছে। শতসহস্র বিধিনিষেধে আটকা পড়েছেন তাঁরা। চাকরি হারিয়েছেন বহু আফগান মহিলা। এর মাঝেই সমানাধিকারের দাবীতে কাবুলের রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেমেছেন দেশের মহিলাদের একাংশ। মন্ত্রিসভায় শামিল করার দাবীতে তাঁরা বিক্ষোভরত। এ প্রসঙ্গে হাসিমির মন্তব্য, যে মহিলারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁরা আফগান সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধি নন। তবে শুধু মন্তব্যেই থেমে নেই তালিব জঙ্গিরা। বিক্ষোভরত মহিলাদের উপর তাঁরা চালাচ্ছেন শারীরিক নির্যাতনও।