করোনার পর কি এবার নয়া আতঙ্ক মাঙ্কিপক্স (Monkeypox)? গত কয়েক দিনের রিপোর্টের পর অন্তত তেমনই আতঙ্কের কথা শোনাচ্ছেন একাংশ। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে গোটা বিষয়টিকে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং তাদের আধিকারিকদের গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৭ তারিখ লন্ডনে এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম এই ভাইরাসের সন্ধান মেলে। লন্ডনে সংক্রমিত সেই ব্যক্তি সম্প্রতি নাইজেরিয়া থেকে ফিরেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, সেখান থেকেই হয়তো এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই পর্তুগাল, স্পেন-সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও খবর।
কী এই মাঙ্কিপক্স? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অনেকটা গুটিবসন্তের মতো একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এই রোগের লক্ষণ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যেকোন সময় এটি অতিমারীর আকার ধারণ করতে পারে। মৃত্যুহারের অনুপাত ৩-৬ শতাংশ। ব্রিটেনের অভিমত, সমকামী কিংবা উভকামী ব্যক্তিদের যৌনচক্র থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ভাইরাসের লক্ষণ কী? সাধারণ বসন্তের মতো লক্ষণ তো আছেই অর্থাৎ গায়ে গুটি গজিয়ে ওঠা। জ্বর, গায়ে ব্যথা তো আছেই। গায়ে, হাতে-পায়ে, মুখে বসন্তের মতো বড়বড় গুটি বেরোতে পারে। অনেকটা ফোস্কার মতো সেই গুটি। যন্ত্রণাদায়ক তো বটেই, সঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আক্রান্তদের ১০ শতাংশের পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। একদিকে করোনার জন্য গোটা বিশ্বে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, তার উপর এই নতুন আতঙ্কে কাবু গোটা বিশ্বই।
মাঙ্কিপক্স কি কেবল বাঁদর কিংবা হনুমানের শরীর থেকে ছড়ায়? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঠিক তেমন ভাবে বলা সম্ভব নয়। কেবল হনুমান কিংবা বাঁদরের শরীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তেমনটা ভাবা ভুল হবে। মূলত পশুদের কামড় কিংবা আঁচড় থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে কাঠবিড়ালি, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীর তীক্ষ্ণ দাঁতের কামড় থেকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌনমিলনের ফলেও অপর ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কি কোন টিকা আছে? ২০১৯ সালে আমেরিকা প্রথম এই ভাইরাসের প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। এই টিকা সাধারণ পক্সের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। গোটা বিষয়টি গবেষণাধীন। আগামী দিনের বিশেষজ্ঞদের অনুমান যদি সত্য হয় অর্থাৎ এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে অনেক বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারে।