মাস খানেক আগেই আন্তর্জাতিক বিচারালয় (ICJ) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গণহত্যার ঘটনাটি নিয়ে সরব হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের স্পষ্ট যুক্তি ছিল বছর পাঁচেক আগে মায়ানমারে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গাদের (Rohingya) বিতাড়নের ঘটনা গণহত্যার সামিল। কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া, তাঁদের সম্পদহানি, ধর্ষণ, অত্যাচার, শারীরিক নিপীড়ন কোন অংশেই গণহত্যার কম নয়। এর প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমার (Myanmar) তেমন কোন যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। তাই আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমারের আপত্তি নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। এবার আমেরিকা মায়ানমারের রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনাটিকে গণহত্যার ঘটনার শিলমোহর দিতে চলেছে। যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চ।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রবিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, জো বাইডেনের প্রশাসন মোটামুটি নিশ্চিত মায়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার গণহত্যার সামিল এবং মানবিকতার চূড়ান্ত বিপর্যয়। আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন (Antony Blinken) হয়তো আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে গোটা বিষয়টির ঘোষণা দিতে পারেন। যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে যে মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর যে অত্যাচার করেছে তা গণহত্যার সামিল। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে এই অত্যাচার অমানবিক, বর্বরোচিত। বিশ্বের ঘৃণ্য ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম।
২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পালিয়ে যান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। মূলত নিপীড়িত এই মুসলিম সম্প্রদায় সমাজের কাছে রোহিঙ্গা বলে পরিচিত। মায়ানমারের এই ঘটনার পর গোটা বিশ্বেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে একদল মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক আদালত রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়। এবার রোহিঙ্গাদের উপর এমন অমানবিক আচরণ যে গণহত্যার সামিল, এমন সিদ্ধান্তে কার্যত শিলমোহর দিতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার হয়তো এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন।
আমেরিকার এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন (Russia-Ukraine) সংকটের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের গভীর সম্পর্ক আছে। তাঁদের যুক্তি রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনের উপর হামলা চালাচ্ছে তা-ও গণহত্যার সামিল হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেখাতে চাইছে আমেরিকা। আর মায়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাটি প্রতিষ্ঠা পেলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ হবে। আমেরিকার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।