সমালোচকদের কথায়, দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকান সেনা আফগানদের প্রশিক্ষণ দিলেন, আমেরিকা আফগানিস্তানের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করলেন। তার ফল কী হল? মাত্র ১০০ দিনের ব্যবধানে গোটা দেশটাকেই নিজেদের কব্জায় নিল তালিবানরা। সেদেশের প্রেসিডেন্ট ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালালেন। হাজার হাজার মানুষ এই মুহূর্তে দেশ ছাড়তে তৎপর। এখানেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা তাহলে এত বছর ধরে আমেরিকার আফগানিস্তানের উপর হম্বিতম্বির ফল কী হল?
গোটা দেশে এই মুহূর্তে যেন জরুরিকালীন অবস্থার বাতাবরণ। একের পর এক শহর নগর দখলের পর রাজধানী কাবুলও চলে এসেছে তালিবানদের হাতে। দেশ দখল দিয়ে থামতে নারাজ তারা। একটি সূত্র মারফত খবর, এবার দেশের নাম বদলাতে তৎপর হয়ে উঠেছে এই তালিবানরা। আফগানিস্তানের নাম বদলে এবার থেকে সেদেশের নাম থাকবে নাকি 'ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান'। খুব শীঘ্রই এই মারফত বিশেষ নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে তালিবানরা। রাষ্ট্রপতি ভবন দখলের পর থেকেই তালিবানদের আগ্রাসন স্তিমিত হলেও কেবল দেশ দখলের মধ্য দিয়ে তারা থামতে নারাজ। দেশের সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির আমূল বদল আনতে চাইছে তালিবানরা, এমনটাই বলেছেন ওয়াকিবহাল মহল। ক্ষমতায় বসার পর তালিবানদের হুঁশিয়ারি দেশের সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা, কর্মচারীদের তাদের কথা মতোই কাজ করতে হবে। কোন প্রকার ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ করা চলবে না। উল্লেখ্য, আগেই তালিবানরা নারী স্বাধীনতার উপর ফতোয়া জারি করেছিল। এবার থেকে সেটাই কার্যকর হতে চলেছে সেদেশে।
আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন কায়েমে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। ভারতের মতোই ব্রিটেন, রাশিয়াও তালিবানদের এই আগ্রাসন মানতে নারাজ। আজই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বসছে জরুরিকালীন বৈঠক। সেখানে আফগানিস্তান বিষয়ে আলোচনার জোরালো সম্ভাবনা। এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে আটকে পড়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এবং কর্মচারীদের উদ্ধার কাজ চলছে। ভারত থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ১২৯ জন যাত্রীকে নিয়ে রবিবার সন্ধেবেলা কাবুল থেকে ফেরার পর ভারত-আফগানিস্তানের মধ্যে বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিনিধিদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। সূত্রের খবর, কাবুলের জেল থেকে প্রায় ৫০০০ জঙ্গিদের মুক্তি দিয়েছে তালিবানরা। আফগানিস্তানের ভারতের টুইটার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্ব।
কাবুলিওয়ালার দেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী সমাজকর্মী মালালা ইউসুফজাই। রবিবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, তালিবানের এভাবে আফগানিস্তান দখলের প্রতিযোগিতা দেখে আমি অত্যন্ত দুঃখিত, ব্যথিত। সেখানকার মহিলা, সংখ্যালঘু এবং মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। বিশ্বের সমস্ত শক্তির কাছে আমার আবেদন, তাঁরা সকলে যেন একযোগে আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন এবং সে দেশের সাধারণ মানুষ ও উদ্বাস্তুদের যেন সবরকম সাহায্য পৌঁছে দেন।"