রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পরে মনে হয়েছিল একতরফা কচুকাটা করবে রাশিয়া। অসম লড়াইয়ের আশা করেছিল গোটা বিশ্ববাসী। এমনকি ইউক্রেনের অন্তিম পরিণতি ভেবে শিউরে উঠছিলেন অনেকেই। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে। আজকের বিশ্ব দেখছে পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক হার না মানা প্রেসিডেন্টের যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে লড়ে যাওয়ার গল্প। মানুষ দেখছেন কৌতুক অভিনেতা থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠা ভ্লাদিমির জেলেনস্কির হার না মানা অদম্য মনোভাব।
রাশিয়া আক্রমণ করার পর একই তীব্রতার সঙ্গে রাশিয়াকে পাল্টা আক্রমণ করছে ইউক্রেন। অস্ত্র এবং সৈন্য উভয়ই রাশিয়ার পক্ষে। কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষে শুধু আত্মবিশ্বাস, দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার অদম্য চেষ্টা। সেখানে দেশবাসীর কাছে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্দুক। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার হানা মায়লার জানান, "প্রায় সাড়ে চার হাজার রুশ সেনা নিকেশ করেছে ইউক্রেন। ১৪৭টি রাশিয়ান ট্যাংক, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে।"
এছাড়া বেলারুশ থেকে ছোড়া একটি ক্রুজ মিসাইল গুলি করে নামানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাাবাহিনী। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কমান্ড্যার-ইন-চিফ টুইট করে জানিয়েছেন, "বেলারুশ ও রাশিয়া আরও একটি যুদ্ধাপরাধ করল। আমাদের বিমানবাহিনী বেলারুশ থেকে ছোড়া একটি ক্রুজ মিসাইল গুলি করে নামিয়েছে। ওই ক্রুজ মিসাইলটি কিভের উদ্দেশে ছোঁড়া হয়েছিল।" প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রুশ সেনারা ইতিমধ্যেই সুমিতে প্রবেশ করেছে যা কিয়েভ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। এছাড়াও সেনাবাহিনী খারকিভে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে গেরিলা যুদ্ধের জন্য তৈরি সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে পথে নেমেছে।
ইউক্রেনের তরফে জানানো হয়েছে, গত ৮ বছরে রাশিয়া সিরিয়ায় যা প্রতিরোধ পেয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রতিরোধ মাত্র ২৪ ঘন্টায় দিতে পেরেছে ইউক্রেন। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার এক প্রথম সারির সাংবাদিক টুইট করে পুতিনকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি লিখছেন, "অসংখ্য ধন্যবাদ মিস্টার পুতিন, আমাকে একজন সাংবাদিক থেকে রিফিউজি হতে বাধ্য করার জন্য"। রাশিয়া এবং ইউক্রেন শান্তি বৈঠকে বসবে কিনা এখনো তা স্পষ্ট নয়, তবে বসলে সেটি যেন বেলারুশ না হয় তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন জেলেনস্কি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের কিয়েভ দখলের চেষ্টা করছে রুশ সেনারা। এরফলে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খারকিভের গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করেছে রাশিয়া। এমন পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার ব্যবসায়ী ব্যাংক এবং সমগ্র অর্থনৈতিক খাতের ওপর সবধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, "ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার একমাত্র বিকল্প হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করা।"