টানা দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে জার্মানির সিংহাসনে একপ্রকার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় রাজত্ব চালিয়ে গেছেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলার মুকুট বারংবার উঠেছে তাঁর মাথায়। তবে সেই খেতাব আর ধরে রাখতে পারলেন না অ্যাঞ্জেলা এবং তাঁর দল। অবশেষে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি) কাছে নতিস্বীকারে বাধ্য হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর।
তবে দীর্ঘ শাসনকালের অবসানের পিছনে বেশ কিছু কারন দেখছে বিশেষজ্ঞমহল। সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে আরও নানান কারনে জার্মানবাসীদের মন পেতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাঞ্জেলার দল সিডিইউ। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে শেষবারের মতো জার্মানির চালকের আসনে বসেছিল এসপিডি। তার পর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছরের অধ্যায়, যা শেষ হল ২০২১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর।
এদিন জার্মানির নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসে। রয়টার্স সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটের ২৫.৭ শতাংশই পেয়েছে এসপিডি। সেখানে অ্যাঞ্জেলার দল অর্থাৎ সিডিইউ-এর প্রাপ্ত ভোটের হার ২৪.১ শতাংশ। বাকি দলগুলির মধ্যে পরিবেশবান্ধব গ্রিন পার্টির ঝুলিতে পড়েছে ১৪.৮ শতাংশ ভোট। লিবারেল ফ্রী ডেমোক্র্যাটসরা পেয়েছেন ১১.৫ শতাংশ ভোট। তবে জার্মানির রাজনৈতিক সমীকরণের এহেন পরিবর্তন দেখে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মোট, এসডিপি পার্টির জয়ের ফলে ইউরোপে ফের বাড়তে চলেছে মধ্য-বামপন্থী দলগুলির প্রভাব।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে অ্যাঞ্জেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ছিলেন ওলাফ গুলজ। নির্বাচনে জয়লাভ করেই তিনি জানিয়েছেন, বড়দিনের আগেই গড়ে ফেলা হবে নতুন জোট সরকার। সূত্রের খবর, এর মাঝেই ইউনিওন দলের তরফ থেকে অ্যাঞ্জেলার প্রতিদ্বন্ধী আরমিন লাশেটও শুরু করে ফেলেছেন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। তবে নতুন চ্যান্সেলর দায়িত্ব নেওয়া না পর্যন্ত কেয়ারটেকার হিসাবে দেশের দায়িত্ব সামলাবেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল।
উল্লেখ্য, এবারে জার্মানির নির্বাচনে ৪৭ টি দল থেকে মোট ৬ হাজার ২১১ জন প্রার্থী প্রদান করা হয়েছিল। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৬০০০। ২০২১ এর এই নির্বাচন অ্যাঞ্জেলার জন্যেও ছিল বিশেষ মহত্ত্বপূর্ণ। শনিবার শেষবারের মতো ভোটের প্রচারে এসেও তিনি জানান, এই ভোট জার্মানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে তিনি এতদিন ধরে জার্মানিকে ভালোবেসে, জার্মানির উন্নতির কথা ভেবে কাজ করেছেন, তাতে এবারও তাঁকেই প্রার্থী হিসাবে চয়ন করা উচিত। যদিও তাঁর এবারের খালি হাতেই ফেরালেন জার্মানবাসী। এখন দেখার, নতুন চ্যান্সেলর পদে কে অধিষ্ঠিত হন এবং তিনি কিভাবে সামলান ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিকে।