আফগানিস্তানের তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই মেয়েদের অধিকার নিয়ে নানা রকম ভাবে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মহলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে তালিবানের সঙ্গে কোনো রকম বোঝাপড়া করতে হয় তাহলে অবশ্যই যোগাযোগের ক্ষেত্রে মহিলা অধিকারের প্রশ্নটিকে সামনে রাখা হবে। এই মর্মে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং উন্নয়নের কয়েক বিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের তরফ থেকে। তাই চাপের মুখে এবারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বাধ্য হলেন তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
আজকে একটি বিবৃতিতে তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বললেন, মহিলারা কোনভাবেই কারো সম্পত্তি নয়। এবং তাদের সাথে থাকার পরেই তাদের বিবাহ হওয়া উচিত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মহিলাদের শিক্ষা এবং বাইরে কাজ করার অধিকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তালিবান সরকার। মহিলাদের অধিকার বিষয়ক ডিক্রি জারি করার মাধ্যমে তালিবান সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। এখানে মহিলাদের বিবাহ নিয়ে মন্তব্য করা হলেও তাদের শিক্ষা এবং কাজের সুযোগ এর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। যা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে তাদের ডিক্রির উপরে। মুজাহিদ বলছেন, 'একজন মহিলা কখনোই কারো সম্পত্তি নয়, মহিলারা স্বাধীন মানুষ। কেউ তাকে শান্তি স্থাপন কিংবা শত্রুতা এবং বিদ্বেষের অবসান ঘটাতে ব্যবহার করতে পারে না। বিবাহ এবং মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত নিয়ম বিধি অনুসারে বলা হয়েছে, বিয়ে করার জন্য কোন মহিলাকে জোর করা যাবে না। তাদের বলপূর্বক ভাবে বিবাহ দেওয়া যাবে না। বিবাহে অবশ্যই তাদের সায় থাকতে হবে। বিধবা মহিলার কাছে তার প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তির ভাগ থাকবে। আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এহেন একটি ডিক্রি মাথায় রাখা উচিত। ধর্মীয় বিষয় সংক্রান্ত এবং তথ্যমন্ত্রকের উচিত এই অধিকারগুলিকে প্রতিষ্ঠা করা।'
যদিও তালিবান সরকারের প্রথম দফার শাসনকালে, মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা ছিল। সেই সময় মহিলাদের পুরো মুখ ঢেকে রাখতে হত বোরখায়। পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনো নিষিদ্ধ ছিল তাদের জন্য। মেয়েদের পড়াশোনা করার অধিকার নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে এবারে মেয়েদের হাইস্কুল খুলতে নির্দেশ দিয়েছে তালিবান প্রশাসন। কিন্তু সুন্নি পাশতুন গোষ্ঠীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে খুব একটা ভরসা রাখছে না নারী অধিকার সংস্থা এবং আইনজীবীরা। তালিবান শাসনে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি রীতিমতো ভগ্নপ্রায়। এই অবস্থায় মহিলাদের নিয়ে নতুন নিয়মাবলী জারি করার সিদ্ধান্ত নিলো তালিবান সরকার। কিন্তু তার মধ্যেও মহিলাদের পড়াশোনা নিয়ে কোনোরকম উল্লেখ নেই। এই কারণেই এই ডিক্রি নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে।