করোনার ছায়া এবার বিনোদন দুনিয়ায়, ফের বন্ধ হতে চলেছে সিনেমা হল! করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে গোটা ভারত। লাগামছাড়া সংক্রমণের জোয়ারে ভাসছে সকলেই, এদিন রাজ্যে ৪২,১১৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাতেও বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। একদিনে রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ৮,৪২৬ জন। তার মধ্যে ২,২১১ জন কলকাতার। ১,৮০১ জন উত্তর ২৪ পরগনার। ৫২২ জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার, ৫২৭ জন হাওড়ার ও ৪৪০ জন হুগলির। এদিন নতুন করে সংক্রমণের ফলে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬,৬৮,৩৫৩। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সুস্থ হয়েছে ৪,৬০৪ জন। যার ফলে মোট সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬,০৪,৩২৯। এদিন সুস্থতার হার আরও কমে হয়েছে ৯০.৪২ শতাংশ।
এদিকে করোনার বাড়বাড়ন্তে বন্ধ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি, কমেছে ট্রেনের সংখ্যা। ফের ওয়ার্ক ফ্রম হোমে গিয়েছেন বহু মানুষ। গত বছরের মতোন এ বছরেও কাজ হারিয়েছেন বহু। আর তার মাঝেই ফের বন্ধের মুখে সিনেমা হল। খবর, এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হতে চলেছে শহরের বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহ। বলাবাহুল্য, এই মুহূর্তে বড়ো কোনো সিনেমা রিলিজেরও নেই। কাজেই যেখানে জনজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা, সেখানে সিনেমাহল বিলাসিতা মাত্র!
তবে গতবারের মতোন সরকারি ভাবে সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ না হলেও, করোনার দাপটে বড় বাজেটের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। যে কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে, সেগুলির সেন্সর রেট বেশি নয়। কাজেই সবদিক বিচার বিবেচনা করে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়েই আবার সাময়িক ভাবে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহের মালিক।
এই রিপোর্ট মোতাবেক ২৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নবীনা, প্রিয়া, মেনকা, জয়ার মতো প্রেক্ষাগৃহ। সংবাদমাধ্যমকে এক প্রেক্ষাগৃহের কমিটি এ সম্পর্কে জানিয়েছেন, "করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে হল বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। বড় বাজেটের ছবি এলে তবেই হল খুলবে। যা অবস্থা হয়েছে, ছোট বাজেটের ছবিতে এই মুহূর্তে সিনেমা হল খোলা খুবই চাপের।"
অন্য আরেকজন প্রেক্ষাগৃহের মালিক বলেন, "বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে সিনেমা হল খুললে কে আসবে? হাতে গোনা কয়েকজন। কোভিড বিধি মেনে বসতে হলে, সেও কমবে বৈকি। তবে এ বার কর্মীদের সাহায্য করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। সরকার তো কিছুই সাহায্য করল না আমাদের।"
অন্য একজনের কথায়, "নিজের ব্যবসা কি কেউ বন্ধ করতে চায়? হলে ছবি নেই। আর দর্শকের প্রেক্ষাগৃহে এসে ছবি দেখার অভ্যেসও চলে গিয়েছে। আর সরকার হল নিশ্চয়ই খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যুতের বিল বা পৌরসভার করের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারতেন। তা করেননি। সব দিক দেখে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।"
তবে সকলেই কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে বাদ দিয়েও বিগ বাজেটের ছবি মার্কেটে আসছে না, এ নিয়েও তোপ দেগেছেন। 'সূর্যবংশী’, ‘থালাইভি’, ‘চেহরে’, ‘রাধে’ বলিউডের বড় বাজেটের ছবি, ৪টি ছবির মুক্তিই আপাতত আটকে। এদিকে বাংলায় বড় বাজেটের ছবির তালিকায় ‘গোলন্দাজ’, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘বেলাশুরু’। সেগুলোও এক্ষুনি মুক্তি পাবে না। তা হলে কিসের টানে হলে দর্শক আসবেন? তার উপর তো রয়েছে করোনার প্রকোপ।
কিন্তু প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা বাধ্য হচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করতে, অথচ কেন সরকারি ভাবে বন্ধ হচ্ছে না? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। তবে অনির্দিষ্ট বিরতিতে কি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কর্মীরা? মালিকেরা কি বিষয়টি সরকারের নজরে আনার কথা ভেবেছেন? এ বিষয়ে মালিকদের রয়েছে দ্বিমত। কেউ বলছেন, তাঁরা আগের বছরের লকডাউন থেকেই কর্মীদের নূন্যতম বেতন দিলেও দিচ্ছেন। তবে অনেকের মতে, "এবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ, এখন বেতন কীভাবে দেব।"