বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Calcutta Medical College)। ‘ওষুধ বিতর্ক’, ‘অনুমতি বিতর্ক’র পর এবার কলেজে ‘হিন্দুত্ববাদ’ ছড়ানোর অভিযোগ উঠল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ‘চরক শপথ’ পাঠ করানোর ঘটনা।
উল্লেখ্য, ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে ‘গৈরিকীকরণ’-এর অভিযোগে দেশজুড়ে ছড়িয়েছিল ব্যাপক বিতর্ক। তার মাঝেই এবার অভিযোগ উঠল, কলেজে এমবিবিএস (MBBS) পাঠরত প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরুর আগে চিরাচরিত ‘হিপোক্রেটিক ওথ’এর বদলে পাঠ করানো হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল প্রস্তাবিত ‘চরক শপথ’।
যদিও ঘটনার বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফাই গেয়ে বলেছে, কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই পাঠ করানো হয়েছে চরক শপথ। মেডিক্যাল কলেজের বক্তব্য শুনে রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য মন্তব্য করে জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা আগে থেকে তাঁকে কেউ জানায়নি।
আর এরপরেই সরব হতে দেখা গিয়েছে একাধিক চিকিৎসক এবং ছাত্র সংগঠনগুলিকে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল পথে নামে ছাত্র সংগঠন ডিএসও। তারা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। উল্লেখ্য, গত ৭ই ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল (NMC), তাদের সর্বভারতীয় বৈঠকে এমবিবিএসের পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে। সেখানেই ‘হিপোক্রেটিক ওথ’এর পরিবর্তে ‘চরক শপথ’ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কাউন্সিলের তরফে। চিরাচরিত রীতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে বিরোধিতা শুরু করে চিকিৎসক এবং ছাত্র সংগঠনগুলি। তার মাঝেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনায় আবার নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন একাধিক মানুষ। তৃণমূল সাংসদ এবং আইএমএ’র রাজ্য সম্পাদক শাতনু সেন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানান, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং এনএমসি’র চেয়ারম্যানের সাথে তিনি কথা বলেছিলেন। উত্তরে তাঁরা জানিয়েছিলেন, বিষয়টি ঐচ্ছিক। তা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজে এমন ঘটনা কেন ঘটল সে বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই। অন্যদিকে ডক্টর সার্ভিস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘চরক শপথ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার শপথ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে তা খাপ খায় না’। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক অংশুমান মিত্র বলেন, ‘এটি আসলে মেডিক্যাল সিক্ষায় গৈরিকীকরণের নামান্তর’।