আজ ২৬ জানুয়ারি, দেশের ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। অনেকেই বলেন সাধারণতন্ত্র দিবস। প্রজাতন্ত্র নাকি সাধারণতন্ত্র তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, তবে আজকের দিনটি প্রত্যেকটি ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আজকের দিনে দেশপ্রেমের মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জয়গান করেন।
দিনটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? আজকের দিনটির তাৎপর্যই-বা কী? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কয়েক বছর। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। পরাধীনতার গ্লানি কুরে কুরে খাচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষকে। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম। দেশকে স্বাধীন করার বাসনায় একের পর এক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহেরু প্রমুখ কংগ্রেস নেতা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম শুরু করেছেন।
সময়টা ১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করলেন পূর্ণ স্বরাজের দাবি। গান্ধীজি নাম দিলেন স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস। লাহোরে উড়ল ভারতের জাতীয় পতাকা। আর ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে জাতীয় কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই ২৬ জানুয়ারি দিনটিই ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবেই পালিত হয়ে আসছিল।
এদিকে বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অবশেষে ব্রিটিশদের শঙ্খল মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট দেশ স্বাধীন হল। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশদের কঠিন শাসনপাশ থেকে মুক্ত দেশ। কিন্তু তখনও দেশের নেই নিজস্ব কোন সংবিধান। শুরু হয়ে গেল সংবিধান রচনার তোড়জোড়। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর সংবিধান রচনার জন্য তৈরি হল গণপরিষদ। চলল মাস কয়েকের আলাপ-আলোচনা। অনেক অদল-বদলের পর ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হল ভারতের রক্ষাকবচ। কিন্তু এখানেই তৈরি হল গোলযোগ। গৃহীত হলেও কার্যকর হল না। অপেক্ষা করতে হল আরও মাস দুয়েক।
১৯৪৭-এর ১৫ অগাস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই দিনটিই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ১৯৩০ সাল থেকেই ২৬ জানুয়ারি দিনটি দেশের মানুষ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। তখনই মনে হয় তাহলে কি ২৬ জানুয়ারির আর কোন গুরুত্ব থাকবে না? ১৯৪৯-এ নেওয়া হল এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সংবিধান গৃহীত হলেও কার্যকর হবে ২৬ জানুয়ারি তারিখেই। এই দিনটি থাকুক ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। সেই হিসেবেই ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকেই স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হল। সমস্ত ভারতবাসীকে একই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতে কার্যকর হল ভারতের সংবিধান। আর সেইসঙ্গে প্রতি বছর আজকের দিনেই পালিত হয়ে আসছে প্রজাতন্ত্র দিবস।
স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবস এক নয়। দুই দিবসেই স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ। দেশপ্রেমের জয়গান করেন দেশবাসী। স্বাধীনতা দিবসে জাতি ইংরেজ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। আর প্রজাতন্ত্র দিবসে পেলেন ভারতের রক্ষাকবচ সংবিধান। যেখানে দেশের প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের অধিকার স্থাপিত হল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তৈরি হল এক নতুন গণতান্ত্রিক দেশ।