দীর্ঘ করোনা আবহ কাটিয়ে রাজ্যে খুলেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত চলছে ক্লাস। কিন্তু ক্লাসরুমগুলিতে উঁকি মারলে বোঝা যায় ক্লাসগুলির অবস্থা। অধিকাংশ ক্লাসরুম খাঁ খাঁ করছে। স্কুল না খোলায় যে দাবিগুলো উঠেছিল, বাস্তবে ক্লাসে অনীহা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে আবার দেখা গেছে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। দিন কয়েক সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলে এমনই করুণ ছবি বারবার উঠে এসেছে। এবারে মালদার একটি স্কুল। ক্লাসের 'ফার্স্ট গার্ল'। স্কুল খুললেও দেখা নেই তার। খোঁজ নিতে গিয়ে শিক্ষকদের তো চক্ষু চড়কগাছ। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল এখন বউ সেজে অন্যের বাড়িতে। স্বামী সেই স্কুলেরই তার এক সহপাঠী।
ঘটনাটি মালদার। শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই কমলাবাড়ি হাইস্কুল। সেই স্কুলে ক্লাস চালু হলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি হাতে গোনা। বেশ কয়েকদিন ক্লাস শুরু হলেও দেখা নেই পড়ুয়াদের। অগত্যা স্কুলের শিক্ষকরাই বেরোলেন পড়ুয়াদের খোঁজে। ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের অনুপস্থিতি অনেকেরই মনে সন্দেহ তৈরি করেছিল। কী হল মেয়েটির! বাস্তবে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়ির মেয়েকে ছাদনাতলায় কবেই পাঠিয়েছেন কে তার খবর রাখে!
মেয়ের বয়স তো ১৮ হয়নি কিংবা ছেলের ২১! থোড়াই কেয়ার বাড়ির লোকের। জবাব, বাড়িতে পাঁচ পাঁচটি সন্তান। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের বোঝানোয় নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন নববধূর বাবা। নিজের অক্ষমতার কথা অকপটে স্বীকারও করলেন। কিন্তু কী আর করা যায়! বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে। যদিও শিক্ষকদের অনুরোধে তারা এখন স্কুলে যেতে রাজি। বিয়ে হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু কতদিন পড়াশোনা চালু থাকবে তার তো ইয়ত্তা নেই। যদিও তারা পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চায়।
সম্প্রতি দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। আইন তো তৈরি হয়, কিন্তু সেই আইনের রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি, প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ। কেবল আইন নয়, জনসচেতনামূলক প্রচারই-বা কোথায়! আর করোনা পরিস্থিতির পর কেবল কি পড়াশোনা, পড়ুয়াদের মানসিক পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে বারবার। প্রশাসনের তরফে তার কি কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? কেবল কি ক্লাসরুমে পড়াশোনা দিয়েই ক্ষান্ত থাকবেন শিক্ষক সমাজ, করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের খোঁজখবর নেওয়া কি জরুরি নয়, এ প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনদের একাংশ।