গত দিন তিনেক নিম্নচাপের রেশ কিছুটা কাটলেও গতকাল রাত থেকেই আকাশের মুখভার। ভোররাত থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টির প্রকোপ। কলকাতাসহ (Kolkata) দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ফের শুরু হয়েছে ভারি বর্ষণ। ক্ষতি হয়েছে চাষের জমি, সব্জির বাগান।অতিবৃষ্টির জেরে প্রাণ গেছে সরকারি হিসেবে ১৬ জনের। নিম্নচাপের রেশ কমলেও জলাধার গুলি থেকে জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গে বন্যা (Flood) পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি মন্ত্রীদের দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সমস্ত এলাকায় ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত কয়েক দিনের লাগাতার নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি এবং জলাধার গুলির বাড়তি জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ এলাকা, হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান জলের তলায়। বিশেষ করে হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর কিংবা হুগলির খানাকুল, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বন্যার কবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ঘাটালে জলবন্দিদের উদ্ধারে নামানো হয়েছে বায়ুসেনাকে। এদিন খানাকুলে ৩১ জন জলবন্দিকে উদ্ধার করেছে বায়ুসেনা। বন্যা বিধ্বস্ত ঘাটাল পরিদর্শন করেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হাতে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রীদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন।
বৃষ্টি কমলেও জলাধার গুলি থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যদিও গত কয়েক দিনে ধীরে ধীরে জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে। মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে এদিন এক লক্ষ কিউসেক মতো জল ছাড়া হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। মূলত এই সমস্ত ব্যারেজ গুলি থেকে ছাড়া বাড়তি জলের চাপে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। ধীরে ধীরে নিম্নচাপের রেশ কাটলেও বাড়তি জলের চাপে ভয় থাকছেই। এদিকে রূপনারায়ণ এবং দ্বারকেশ্বর নদী ভয়ানক হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকে গেছে। হুগলির খানাকুল ২ ব্লকের ১১ টির বেশি পঞ্চায়েত জলের তলায়। জলবন্দিদের উদ্ধারে নামানো হয়েছে বায়ুসেনাকে।
এ পর্যন্ত বন্যার কবলে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। এদের অধিকাংশই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে কিংবা দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন। কালিম্পঙে ২ জন ভূমিধসের কারণে মারা গেছে। পশ্চিম বর্ধমানে মাটির বাড়ি চাপা পড়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী ত্রিপল, পানীয় জল, শুকনো খাবার, ওষুধ সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।