অনুব্রত মণ্ডল নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্ল্যাকমেইল করেছেন, এবং সেই কারণে তিনি নলহাটির বিদায়ী বিধায়ক মইনুদ্দিন শামসকে টিকিট দিতে পারেননি। নেটদুনিয়ায় কিছুদিন আগে এই রকম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল, যার মাধ্যমে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন তার নিজের মন্তব্যের সাফাই দিতে নিজেই মাঠে নামলেন ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার তিনি লিখলেন, "আমার তৃণমূল কংগ্রেস এমন একটি দল, যেখানে ক্ষুদ্রতম কর্মীর বক্তব্যেরও দাম আছে। তাই যখন আমি বলেছি যে, অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে কোনও প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া হয়নি, তা আসলে দলের বিশুদ্ধতার চিহ্ন এবং আমার নেত্রীর স্বার্থবিরোধী স্বভাব’। এরপরেই বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন তিনি। ফিরহাদ লিখেছেন, ‘যদি আমারা এটাকে স্যাফ্রন (গেরুয়া) ব্রিগেডের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে তুলনা করি, যেখানে কেউ তাদের সর্ব্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না, আমি বরং তখন আমার বক্তব্য নিয়ে গর্ববোধ করি’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘যথারীতি বিজেপি কোনও সুযোগ ছাড়েনি ভ্রান্ত সংবাদ প্রচার করার ও ছড়িয়ে দেওয়ার।"
গত মঙ্গলবার কলকাতা বন্দর বিধানসভা এলাকার ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কর্মী সম্মেলন করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তিনি তৃণমূল কাউন্সিলর নিজামুদ্দিন শামসকে পাশে বসিয়ে বলেন কেন মইনুদ্দিন শামসকে টিকিট দেওয়া হয়নি। আবার মইনুদ্দিন এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ওই ভিডিওটি লাইভ করা হয় এবং সেটি পরবর্তীকালে ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ভিডিওতে আমরা ফিরহাদ কে স্পষ্ট ভাবে বলতে শুনেছি, "আমরা কেন মইনুদ্দিন এর টিকিট কাটবো? যখন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছিল তখন আমি দিদির পাসে বসে ছিলাম। আমারও জানা ছিল না ওর নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে। যখন আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে জিজ্ঞেস করলাম কেন ওর নাম বাদ গেল, তিনি উত্তর দিলেন অনুব্রত আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। জোরজবরদস্তি অন্যের নাম বসিয়ে দিয়ে মইনুদ্দিন এর নাম কেটে দিয়েছে। আমার এখানে কিছু করার নেই।"
এছাড়াও ফিরহাদ হাকিম বললেন, "মমতা দিদি আমাকে বলেছেন, আমাকে সবাইকে রাখতে হয় এবং সবাইকে সামাল দিতে হয়। মইনুদ্দিন টিকিট পায়নি এবং এই ব্যাপারে আমিও অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। আমি পরের দিন নিজাম ভাইকে বলেছি। উনি একজন ভালো মানুষ। কখনো কোনো ঝামেলায় থাকেন না এবং চুপচাপ নিজের কাজ করে যান। এরকম একটি মানুষ টিকিট না পাওয়ায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত। কোন নেতা এভাবে কিছু বলবেনা। কিন্তু আমি এসব কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করছি।"
অন্যদিকে আবার ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনুব্রত মণ্ডলের ভাবমূর্তি সর্বজনবিদিত। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, যদি একজন নেতার চাপে মুখ্যমন্ত্রী নতি স্বীকার করেন তাহলে এরকম বার্তা যদি জনমানুষের কাছে পৌঁছায় তবে, ভোটের আগে অত্যন্ত খারাপ বিষয় হবে। নেট মাধ্যমে তাদের এই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের মধ্যে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই মইনুদ্দিন এ বছরে টিকিট না পাওয়ার কারণে ওই আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস ওই আসনে প্রার্থী করেছে রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহকে।