সকাল থেকেই আকাশের মুখভার। বেলা বাড়তেই বাড়ছে দুর্যোগের প্রকোপ। ঘন কালো আকাশে ঢেকেছে সোমবারের সকাল, সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। আলিপুর হাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, আগামী কয়েক ঘন্টায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশকিছু জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। ফের উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে দীর্ঘদিন বিভিন্ন জেলায় চলবে সারাদিন বৃষ্টি। বাড়তে পারে সমুদ্রের জলস্তর।
গতকাল রাত থেকেই শহর কলকাতায় চলছে বৃষ্টি। ইতিমধ্যেই নীচু এলাকায় জল জমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জায়গায় আগের জমা জল নামতে না নামতেই ফের শুরু হয়েছে জলযন্ত্রনা। গতকাল রাত ১১ টা থেকে ৩ টে পর্যন্ত গঙ্গার লকগেট বন্ধ ছিল। তার জেরে অল্প বৃষ্টিতেই শহর কলকাতার বেশ কিছু অঞ্চল জলমগ্ন। আজ আবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ৩ টে পর্যন্ত লকগেট বন্ধ থাকবে। যার জেরে ভারি বর্ষণের কারণে রাস্তায় জল জমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টির প্রকোপ। শিয়ালদহ, উল্টোডাঙা, ধাপা, তপসিয়া, আর দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ, যোধপুরপার্ক, গড়িয়া প্রভৃতি এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফের জলমগ্ন। কোন কোন জায়গায় কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রবিবার রাত থেকেই হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগণা, দুই মেদিনীপুরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, পটাশপুর, কাঁথি, এগরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও জলের তলায়। কেলেঘাই, বাগুই প্রভৃতি নদীর নদীবাঁধ ভাঙায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। এসেছে এনডিআরএফের স্পেশাল টিম। জলস্তর কিছুটা কমলেও ফের বৃষ্টির আশঙ্কায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কেলেঘাই নদীর বাঁধভাঙা জলের তোড়ে ভগবানপুর ২ ব্লকের ইটাবেড়িয়া, বাসুদেববেড়িয়া, আড়গোয়াল, অর্জুননগর, বরোজ প্রভৃতি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে কাঁথি ৩ ব্লকের ভাজাচাউলি এবং এগরা ২ ব্লকের বাথুয়াড়ী অঞ্চলের খালপাড় সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন। আড়গোয়াল-বরোজ ক্যানেলের জল পাঁউসি সুইস গেটের মুখে পাহাড়প্রমাণ জলরাশির সৃষ্টি করেছে। ইটাবেড়িয়া বাজার এলাকা জলমগ্ন। ইটাবেড়িয়া রাইস মিলের ভিতর জল ঢুকে লক্ষ লক্ষ টাকার ধান ও চাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গৃহস্থবাড়ীতে কোমরসমান জলে সব কিছু বিনষ্ট। জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। ভগবানপুর ২ ব্লকের জলমগ্ন এলাকায় পানীয়জল, শুকনো খাবার, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, ত্রিপল ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করার আবেদন জানিয়ে জেলাশাসক কে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন। রাজ্য সরকারের মৎস্যমন্ত্রী তথা রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অখিল গিরি ও এগরা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তরুণ মাইতি নিজ নিজ এলাকায় প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বানভাসি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।