“তারিখ পে তারিখ... তারিখ পে তারিখ...”। হ্যাঁ সত্যি। দামিনী সিনেমার এই সংলাপটা যেন আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে প্রতি মুহূর্তে সত্যি। ওই যে সিনেমাটায় সবাই জানে কে দোষী, কে ধর্ষক তবু আদালত থেকে একটার পর একটা 'তারিখ' (ডেট) দিতে থাকে শুনানির। বিচার আটকে পরে থাকে দামিনীর। না। ওটা তো সিনেমা। ওখানে একটা নায়ক এসে সামলে দিয়ে চলে যেতে পারে সবটা। কিন্তু বাস্তবে? জানি না। তবে খুব পরিচিত একটা প্লটের সাথে মিলেও যেতে পারে।
একটা তারিখ বলি, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২। ঐতিহাসিক দিন। রথযাত্রা করে রামের জন্মভূমিতে জড়ো হওয়ার দিন। 'শোভাযাত্রা'-র মূলভাগে আডবানির মতো নেতা। সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু কেউ কি জানতো এই ভক্তের ভিড় ইতিহাস মুছে দেবে। মাটিতে মিশিয়ে দেবে বাবরের সময়ে তৈরি 'বাবর ই মসজিদ'! কিন্তু ঘটলো সেটাই। দেখলো সারা দেশ। সারা বিশ্ব। একটা ইতিহাস মুছে আরেকটা ইতিহাস তৈরি হলো বটে। তবে সেটা মোটেই ভারতীয়ের কাছে গর্বের ইতিহাস নয়। না। গর্বের নয় সেটাও বলা যায় না। কিছু মানুষ তো রামকে তার হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার স্বার্থেই ঘটিয়েছিল সেদিনের ঘটনা। দাবি ছিল ঠিক যে জায়গাটায় বাবরি মসজিদ ছিলো সেখানেই নাকি আগে ছিলো রাম মন্দির। বাবরের সময় সেই মন্দির ভেঙে মসজিদ করা হয়।
১৯৯২ থেকে ২০২০। ২৮ বছর কেটে গেছে। আরেকটা তারিখ এসে পড়েছে আমাদের সামনে। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০। মসজিদ ভাঙার মামলার রায় দেওয়ার দিন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিসের রায়? গোটা দেশ তো চোখের সামনে দেখেছিল সেদিনের ঘটনা। খুব কি কঠিন ছিল এর বিচার করা যে ২৮ বছর লেগে গেলো তাতে? হতেই পারে। কিন্তু কালকের রায় তো নিম্ন আদালতে। কাল যদি আডবাণীদের দোষী ঘোষণা করাও হয় তাহলে তাঁরা যাবেন উচ্চতর আদালতে। তারপর সুপ্রিম কোর্টে। মানে আবার চলতে থাকবে শুনানির ডেট। আর ইতিহাস বিচার ব্যবস্থার দিকে লোভীর মতো তাকিয়ে বসে থাকবে কোনদিন ন্যায় পাওয়ার আশায়। কিন্তু ততদিন দোষীরা থাকবে তো? জানি না। আর বিজেপির নেতা তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে গিয়ে রামমন্দির তৈরির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন তারপরও বাবরি মসজিদ ভাঙার বিচারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকাটা বোকামি নয় কি? কি জানি!