রবিবার আগরতলায় গাড়ি চালিয়ে মানুষ খুনের অভিযোগে তৃণমূল যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে গ্রেফতার করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। কার্যত তারপর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করা হয়েছে। যদিও এই প্রশ্ন এই প্রথম নয়। এর আগেও ত্রিপুরার আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলেছে অন্যতম বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবারে সায়নী ঘোষের গ্রেফতারের পর তৃণমূলের সংসদীয় দলের তরফ থেকে তৎপরতা গ্রহণ করা হলো। ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবারে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল কংগ্রেস। সন্ধ্যায় তৃণমূল সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ত্রিপুরায় আইন শৃংখলার অবনতিতে অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সময় চেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরা। ইতিমধ্যেই সাংসদদের দিল্লিতে পৌঁছান নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সংসদীয় দল। মনে করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই অমিত শাহের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদবর্গের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
সোমবার দিল্লিতে ধর্না কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছেন তৃণমূল সাংসদরা। তবে সোমবার মূলত অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তৃণমূল সাংসদের। যারা যাচ্ছে ১৫ জনের তৃণমূল সাংসদের দল অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন। তবে এর মধ্যে সবথেকে বড় বিষয়টি হলো, সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপস্থিতিতে তৃণমূলের সাংসদরা একসাথে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন নাকি শুধুমাত্র তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক হবে অমিত শাহের? রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত শাহের বৈঠক নিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যতই তৃণমূল সাংসদদের দিল্লি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক না কেন, অমিত শাহের সঙ্গে হয়তো বৈঠক করতে চলেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে সায়নী ঘোষের গ্রেফতারি বেশ বড় একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে। ত্রিপুরার পুরভোটের আগে রবিবার শেষ প্রচারের দিন সায়নী ঘোষের গ্রেফতারের ঘটনা রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ত্রিপুরার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে। তৃণমূল নেতারা একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ত্রিপুরা বিজেপির নির্দেশে সায়নী ঘোষের মতো একজন নেত্রীকে গ্রেফতার করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। রবিবার বিকেলে খুনের চেষ্টার অভিযোগে থেকে গ্রেফতার করে আগরতলা থানার পুলিশ। জানা যায় তার বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশ কর্তারা। রবিবার সকাল থেকেই আগরতলা পূর্ব থানায় উপস্থিত হয়েছিলেন সায়নী ঘোষ। তারপর পুলিশ কর্মীরা তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলেও খবর। তার সাথে সাথেই সুস্মিতা দেব এবং প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ এবং কুনাল ঘোষ তার সাথে উপস্থিত ছিলেন থানায়।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেতৃবর্গের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত গুন্ডারা নাকি থানায় ঢুকে তাদের কর্মীদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। লাঠিসোটা নিয়ে হেলমেট পরে তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সায়নী ঘোষ থানায় ঢুকতেই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কর্মীদের ওপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতা সুভাষ ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছেন শুধুমাত্র সায়নী ঘোষের গ্রেফতারি নয় গোটা ত্রিপুরার আইন-শৃংখলার কার্যত ভগ্নপ্রায় দশা বিপ্লব দেব এর আমলে। ইতিমধ্যেই, বিজেপির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার বিজেপির কর্মকাণ্ড নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত তৃণমূল দল। এখন এটাই দেখার, এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বৈঠকে ধারা ঠিক কি রকম হয়।