দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) দ্বিতীয় ঢেউ নাজেহাল করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। সম্প্রতি সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করছে করোনার ডেল্টা প্রজাতির রূপান্তরিত ভার্সন ডেল্টা প্লাস (Delta Plus) প্রজাতি। এখনও অব্দি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ডেল্টা প্রজাতিকে মারাত্মক প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তারই রুপান্তরিত রুপ ডেল্টা প্লাস নিয়ে আলাদাভাবে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে যে এই নতুন প্রজাতির যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ডেল্টা প্রজাতি যেভাবে রূপান্তরিত ডেল্টা প্লাস তৈরি হয়েছে সেটাকে বলে কে৪১৭এন। এর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকায় বিটা প্রজাতির এরকম রূপ বদল হয়েছিল। বর্তমানে গোটা বিশেষজ্ঞমহল মোট চারটি প্রজাতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথমটি হলো কাপা প্রজাতি বা ডবল মিউটেন্ট প্রজাতি যা আদপে বি.১.১৬৭.১। এটিতে ব্রাজিলের ই৪৮৪কিউ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ই৪৮৪কে প্রজাতির ডবল মিউটেশন রয়েছে। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা ভেঙে সংক্রমণ করতে পারে। অন্যটি হলো ল্যামডা প্রজাতি যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৪ জুন "ভ্যারিয়েন্ট অফ কন্সার্ন" বলে চিহ্নিত করেছিল। এটি পেরু এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতে পাওয়া যাওয়া বি.৬১৭.৩ যা ডেল্টা প্রজাতি থেকে তৈরি হয়েছে। এছাড়া আপাতত বি.১১.৩১৮ নামক একটি প্রজাতির যা কাপা প্রজাতির রূপান্তরিত রূপ, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতে টিকাকরণ অত্যন্ত দ্রুত করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই জরুরি ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রয়োগ করা অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল মার্কিন টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা মর্ডানা (Moderna)। জানা গিয়েছে যে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) আবেদন গ্রহণ করলেই প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রয়োগ করার জন্য সরকারের হাতে আরও একটি টীকা চলে আসবে। এই প্রসঙ্গে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, "নির্দিষ্ট কিছু দেশে ছাড়পত্র পেল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় থাকলে সেই সংস্থার টিকার আর দেশীয় ট্রায়ালের কোন প্রয়োজন হয় না। ট্রায়াল ছাড়াই সেই সমস্ত টিকা প্রয়োগ করা যেতে পারে। মর্ডানা ফাইজার ইত্যাদি খুব শীঘ্রই দেশে অনুমোদন পাবে।" নীতি আয়োগ এর এক সদস্য জানিয়েছেন, "ফাইজার ও মর্ডানার তৈরি টিকা অনুমোদন দেওয়ার কতকগুলি ধাপ রয়েছে এবং সরকার শীঘ্রই সেই পথ অনুসরণ করে এগোচ্ছে।" এই টিকা ভারতে আমদানি করার জন্য মুম্বাইভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সিপলা আবেদন জানিয়েছে ইতিমধ্যেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে আগের বেশকিছু সপ্তাহের তুলনায় স্বস্তির জনক অবস্থায় রয়েছে দেশের করোনা গ্রাফ। এক ধাক্কায় অনেকটাই কমেছে দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় দেশজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯০৭ জনের। একদিনের সুস্থ হয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৯৪ জন। শতাংশ হারে সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৯৬.৮৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টার সংক্রমণের হার শেষ ১০২ দিনের তুলনায় ন্যূনতম। বলা যেতে পারে ভারতজুড়ে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানি।