এবারের নির্বাচনে হেরে গেলেও বাংলা বিজয় নিয়ে হাল ছাড়তে নারাজ গেরুয়া শিবির। গেরুয়া ব্রিগেড আশা করেছিল সংখ্যালঘু ভোটের কিছুটা পরিমাণ তাদের দিকে যাবে। কিন্তু সেই সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির দিকে তেমন একটা যায়নি। তাই এবারে বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন একজনকে কেন্দ্রে একটি জায়গা দেওয়া হবে। সেইমতো পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেত্রী ইসরাত জাহান এবারে নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার কেন্দ্রীয় সম্পাদক হিসেবে। আগামী ২০২৪ লোকসভা এবং ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্তে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞদের একাংশ। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের সমর্থন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বিজেপির দিকে টানার জন্য এই ব্যবস্থা।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরেই প্রশ্ন ওঠে দলে সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। অনেকে আবার এই সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়া নিয়ে টুইট করতে শুরু করেন। কিন্তু, বাংলা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি নেতাদের ভাবনা একটু অন্যরকম। তারা মনে করছেন সংখ্যালঘু ভোট যদি না আসে, তাহলে বাংলা বিজয় অসম্ভব। তাই সংখ্যালঘুদের ভোট নিজেদের দিকে টানার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। সেই কারণেই বাংলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নেত্রী ইসরাত জাহানকে বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার কেন্দ্রীয় সম্পাদক করে নির্বাচিত করলেন কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা।
ইসরাত জাহান শুধুমাত্র যে বিজেপি মহিলা মোর্চার সংখ্যালঘু শাখার আহ্বায়ক তা কিন্তু নয়, তিনি সংখ্যালঘুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও বটে। তার পাশাপাশি, তিন তালাক ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে তিনি মামলা করেছিলেন। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে টিকিট পাননি ইসরাত জাহান। কিন্তু, সংখ্যালঘু মানুষদের মধ্যে ইসরাত জাহানের গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিচিতি অনেক বেশি। সংখ্যালঘু প্রভাবিত কেন্দ্রগুলোতে এবারে বিজেপির অন্যতম তারকা প্রচারক ছিলেন ইসরাত জাহান। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিয়ে তেমন মাতামাতি করেনি বিজেপি। বরং তাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট ছিল মতুয়া সম্প্রদায়। দলের অন্দরে অনেক সংখ্যালঘু নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এই বিষয়টি নিয়ে।
বহু বিজেপি সংখ্যালঘু নেতানেত্রী অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যদি সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে বিজেপির বাংলা জয়ের আশা সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব এর ভরসা ছিল সংখ্যাগুরুদের উপর। তাদের আশা ছিল সংখ্যালঘুরা যদি তৃণমূলকে ভোট দেয় তাহলেও সংখ্যাগুরুদের ভোট পেয়ে বাজিমাত করে দেবে বিজেপি। কিন্তু সেরকম আর হলো কই, সংখ্যালঘু ভোট তো বিজেপির দিকে এলই না, বরং সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ও তৃণমূলকে ভোট দেওয়ায় মাত্র ৭৭টি আসনে থেমে গেল বিজেপির বিজয়রথ। তাই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য অন্যরকম প্ল্যান, অন্যরকম চিন্তাভাবনা। আর সেই চিন্তাভাবনা থেকেই সংখ্যালঘুদের মন পাওয়ার জন্য দলের সংখ্যালঘু মোর্চার কেন্দ্রীয় সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের বিজেপি নেত্রী ইসরাত জাহান।