নারকো কোঅর্ডিনেশন সেন্টার নিউ দিল্লিতে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তৃতীয় অ্যাপেক্স লেভেল সভায় বক্তৃতা রাখলেন। এই বক্তৃতা সভা থেকে অমিত শাহ বেশকিছু নতুন এবং বড় ঘোষণা করলেন ভারতের পরবর্তী কিছু পদক্ষেপ নিয়ে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য ভারতকে সম্পূর্ণরূপে ড্রাগ ফ্রি করার। কেন্দ্রীয় নারকটিকস বিভাগের সঙ্গে কথা বলার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, "ভারতের যুব সমাজের জন্য এবং ভারতের জাতীয় সুরক্ষার জন্য ড্রাগস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্ষতিকারক। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ভারতকে ড্রাগ মুক্ত করার সমস্ত প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় নারকটিকস বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় সরকার একসাথে কাজ করবে।" এছাড়াও আজকের সভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড্রাগস গ্রহণ করাকে একটি বড় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করলেন।
অমিত শাহের ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নারকটিকস বিভাগের সঙ্গে একসাথে কাজ করে প্রত্যেকটি রাজ্যকে একটি অ্যান্টি নারকটিকস টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। রাজ্যের নারকটিকস বিভাগের সচিবদের দ্বারা এই টাস্কফোর্স কাজ করবে। এছাড়াও নারকটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো একটি কেন্দ্রীয় নারকটিকস কোঅর্ডিনেশন সেন্টার তৈরি করবে, যারা সমস্ত রকমের নারকটিকস ট্রেনিং মডিউল গঠন করবে জাতীয় স্তরে কাজ করার জন্য। এই ট্রেনিং মডিউলে পুলিশ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং সিভিল ডিপার্টমেন্ট এর সমস্ত ব্যক্তিদের ট্রেনিং দেওয়া হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীবর্গের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে ভারতের ড্রাগ ব্যবহারের উপরে নজর রাখার জন্য।
ওষুধের মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই ড্রাগ না ছড়িয়ে পড়ে, তার দিকে নজর রাখবে এই অন্তর্বর্তী কমিটি। আর এই কমিটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত হবে ভারতের স্বাস্থ্য এবং মানব কল্যাণ দপ্তরের অধীনে থেকে। উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। প্রত্যেকটি বন্দরে, বিমান বন্দরে ড্রাগস এবং যেকোনো মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধ করার জন্য তল্লাশি চালানো হবে। কেন্দ্রীয় স্তরে একটি নার্কো ক্যানাইন পুল তৈরি করা হবে। এই বিশেষ স্কোয়াডের কিছুটা অংশে রাজ্য পুলিশরা কাজ করতে পারবেন।
এছাড়াও একটি ইন্টিগ্রেটেড নারকটিকস কোঅর্ডিনেশন পোর্টাল তৈরি করা হবে যাতে সুষ্ঠুভাবে এই মিশন সম্পন্ন করা যায়। বেশকিছু সংস্থা এবং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে এই মর্মে। ভারতের যুব সমাজকে মাদকদ্রব্য থেকে মুক্ত করার জন্য চালানো হবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন। তৈরি করা হবে একটি ন্যাশনাল নারকটিকস কল সেন্টার যার নাম দেওয়া হবে মানাস। ডার্ক ইন্টারনেট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই নিষিদ্ধ ড্রাগ ভারত থেকে ক্রয় করা না যায়, তার দিকে নজর রাখার জন্য আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। ড্রোন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ড্রাগের প্রবেশের ওপর নজরদারি চালানো হবে। দেশের একাধিক জায়গায় ড্রাগ মুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। স্কুলের সিলেবাসের মধ্যেও মাদকদ্রব্য এবং ড্রাগস এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি নিয়ে কিছু অধ্যায় সংযুক্ত করা হবে। ভারতের শিক্ষা এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘ কর আলোচনা হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সর্বোপরি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্যারা মিলিটারি ফোর্স এবং রাজ্য পুলিশ একসাথে কাজ করে ভারতকে ড্রাগ মুক্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী বছর ২০২২ এর ১২ জানুয়ারি জাতীয় যুব দিবস অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম জয়ন্তীর দিন থেকে এই কর্মসূচি চালু হবে বলে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।