ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হলেন ডক্টর এস. সোমনাথ (Dr. S. Somanath)। দেশের প্রথম সারির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ এবং একজন রকেটবিজ্ঞানী হবার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ইসরোর একজন অন্যতম বিজ্ঞানী হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব সামলেছেন ডক্টর সোমনাথ। কে. শিভানের (K. Sivan) স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন তিনি। শুক্রবার শিভান তার বর্ধিত মেয়াদ শেষ করার পরেই ইসরোর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হতে চলেছেন ডক্টর সোমনাথ। বুধবার সোমনাথকে মহাকাশ বিভাগের সচিব এবং মহাকাশ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেছে ইসরো। ভারত সরকারের পার্সোনেল মন্ত্রক একটি আদেশ জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী তিন বছরের জন্য ইসরোর চেয়ারম্যান হতে চলেছেন ডক্টর এস সোমনাথ। জনস্বার্থে চাকরি শেষ হওয়ার পরে তার মেয়াদ তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে পার্সোনেল মন্ত্রকের তরফ থেকে।
১৯৬৩ সালে জুলাই মাসে কেরালার আলাপুজ্জা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডক্টর সোমনাথ। তার বাবা ছিলেন কেরালার একটি স্থানীয় স্কুলের খুব সাধারণ মানের হিন্দি শিক্ষক। স্কুল জীবন থেকেই ডক্টর সোমনাথ চাইতেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। বিশেষত, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে ছিল তার বহুদিন থেকেই। স্কুল জীবনের গণ্ডি শেষ করে কেরল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো একটি শক্ত সাবজেক্ট নিয়ে স্নাতক হলেন ডক্টর সোমনাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। কলেজ জীবনে রকেট সাইন্স নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। তারপর বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রি এবং স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন ডক্টর সোমনাথ।
কলেজ জীবন চলাকালীন সময়েই তিনি ইসরোর একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগদান করেন। আগের সেমিস্টারের দুর্দান্ত নম্বর থাকার কারণে তিনি সহজেই ইসরোর চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই সময় ইসরো বেশ কয়েকজন তরুণ জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করেছিল তাদের পিএসএলভি প্রোজেক্টের জন্য। সেখানে কাজে যোগদান করেন ডক্টর সোমনাথ। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরে ইসরোর পরবর্তী বড় মাপের প্রজেক্ট জিএসএলভি এমকে - ৩ প্রোজেক্টের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। সেই প্রজেক্ট এর টিম লিডার হিসেবে কাজ করেছিলেন ডক্টর সোমনাথ। তার এই প্রোজেক্টের সফলতার পরে ভারতীয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি তাকে পারফরম্যান্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করেন ২০১৪ সালে।
হাই-থ্রাস্ট সেমি ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এটি দ্রুত হার্ডওয়ার উপলব্ধি এবং পরীক্ষা পদ্ধতি তৈরি করার কাজ করেছিল। এছাড়াও চন্দ্রযান ২ এর ল্যান্ডিং ক্রাফটের জন্য থ্রোটেবল ইঞ্জিন তৈরি করা, এবং জি-স্যাট ৯ এর বৈদ্যুতিক প্রপালশন সিস্টেমের সফল ফ্লাইট তৈরীর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন ডক্টর সোমনাথ। এছাড়াও লঞ্চ ভেহিকেল ডিজাইন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার রয়েছে অগাধ জ্ঞান। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, স্ট্রাকচারাল ডায়নামিকস, ইন্টিগ্রেশন ডিজাইন এবং মেকানিজম ডিজাইনের সঙ্গে পাইরোটেনিক্সেরও বিশেষজ্ঞ ডক্টর সোমনাথ। বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার এর ডিরেক্টর পদেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব সহকারে কাজ করেছেন ডক্টর সোমনাথ। রকেট সাইন্স নিয়ে গবেষণা করা পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কিছু গবেষণার মধ্যে একটি। কিন্তু তার মধ্যেও কিভাবে নিজের কাজটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন ডক্টর সোমনাথ? এ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তার জুনিয়ররাই। তারা বলছেন, 'আমরা রকেট এর উপরে কাজ করি, শুধু এই জন্য নয় যে সেগুলি কৃত্রিম উপগ্রহকে ধরে রাখে; রকেট হল একমাত্র জিনিস যার উপর ভরসা করে মানুষ এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে চলে যেতে পারে। রকেট ছাড়া এটা কার্যত অসম্ভব। আর এটাই ডক্টর সোমনাথের আগ্রহের একমাত্র রসদ।'