গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে ছুটি চাই তো সে। কিন্তু সেটাই বরদাস্ত করতে পারতেন না গৃহকর্ত্রী। সেই দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া তো দূরের কথা বরং বরাদ্দ থাকতো শাস্তি। বেধড়ক মারধর, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে ঘরে আটকে রাখা, একদিন নয় বরং অনেক দিন ধরে পরিচারিকার উপরে একাধিক বার অত্যাচার, সর্বোপরি প্রস্রাব পর্যন্ত চাটানোর অভিযোগ উঠেছে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেত্রী সীমা পাত্রের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতির চাপে এর মধ্যেই তাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঝাড়খন্ড বিজেপি।
জানা গিয়েছে, বিগত আট বছর ধরে সীমা পাত্র সুনীতা নামের ওই মেয়েটির উপরে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছেন। সীমা দেবী এই মুহূর্তে বিজেপির নির্বাসিত একজন নেত্রী হওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রাক্তন আইএএস অফিসার মহেশ্বর পাত্রের স্ত্রী। অন্যদিকে, সুনীতা অত্যন্ত প্রান্তিক একজন মহিলা। সূত্রের খবর, আদতে গুমলা গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণী আদতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন সদস্যা। বছর দশেক আগে পাত্র পরিবারে প্রথমবার পরিচারিকার কাজ করতে এসেছিল মেয়েটি। প্রথমে বছর সঙ্গে তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পাত্র দম্পতি। পরে তাদের মেয়ের ট্রান্সফার হয়ে যাবার পর আরো একবার রাঁচি ফিরে আসে সুনীতা।
তারপর থেকেই শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললেই তাকে বেধড়ক মারধর করতেন সীমা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে তার হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হতো। এরকম পরিস্থিতি দেখে সুনীতাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সীমা পাত্রের পুত্র আয়ুষ্মান পাত্র। নিজের বন্ধু বিবেক বাস্কের সঙ্গে পরামর্শ করে সুনীতাকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে আয়ুষ্মান। বিবেক বাস্কে ঝাড়খণ্ডের কর্মীব বর্গ দপ্তরের একজন আধিকারিক। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের গোচরে আনেন এই বিষয়টিকে। তারপরেই ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ওই তরুণীকে।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, ইতিমধ্যেই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে ঝাড়খন্ড পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। সঙ্গে সংযোজন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেন গেরুয়া শিবিরের ওই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যেই রাঁচি পুলিশ এই নিয়ে এফআইআর রুজু করে দিয়েছে। আরগোড়া পুলিশ স্টেশনের স্টেশন ইনচার্জ জানিয়েছেন, ওই পরিচারিকার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় তার বয়ান গ্রহণ করা হবে। এই মুহূর্তে রাঁচির আরআইএমএস হাসপাতালে তিনি ভর্তি হয়েছেন। দেহে একাধিক আঘাত রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, লোহার রড ব্যবহার করে তাকে মারা হয়েছিল। অত্যাচারের কারনে তার দাঁত ভেঙে যায়। এরপর দিনের পর দিন খাবার বা জল কিছু না দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর কোনো কারণে দরজার ফাঁক দিয়ে তার প্রস্রাব বেরিয়ে এলে সেটা তাকে দিয়ে চাটানোর অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ আগস্ট গুরুতর জখম অবস্থায় ওই তরুণীকে রাঁচির অশোকনগরে বিজেপি নেত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।