একুশে বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election) বিজেপিকে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করে বাংলার মসনদে আগামী ৫ বছরের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তবে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাই তাঁর পাখির চোখ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন, ২০২৩। সেই উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ তৃণমূল নেতার টিম গঠন করেছেন তিনি। তাঁরা ত্রিপুরায় তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি ও প্রসারের কাজ করবে। সেই কাজের অংশ হিসেবে গতকাল অর্থাৎ শনিবার ত্রিপুরার (Tripura) সোনাচূড়ার কাছে পৌঁছেছিলেন যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত প্রমুখরা। তাঁদের গাড়ি আটকে হামলা চালানো হয় এবং সন্ধ্যেবেলা মারধর করা হয়। দফায় দফায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁরা প্রতিবাদ করতে রাতভর থানার সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিক্ষোভ দেখানোর জন্য আজ রবিবার সকালে মহামারী আইনে খোয়াই থানার পুলিশ সুদীপ রাহা, দেবাংশু ভট্টাচার্য, জয়া দত্ত, ত্রিপুরা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিংহ সহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেন। তাদের গ্রেফতারের খবর শুনেই তড়িঘড়ি ত্রিপুরায় পৌঁছেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ, বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং নেত্রী দোলা সেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থানাতে পৌছেই রণমূর্তি ধারণ করেছিলেন। স্বভাবত রাজনৈতিক জীবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ শান্ত হয়ে সমস্ত কাজকর্ম করেন। কিন্তু আজ এক অন্য রূপে দেখা গেল তৃণমূল নেতাকে। তিনি থানায় ঢুকে ভারপ্রাপ্ত অফিসারদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দিলেন এবং হুঁশিয়ারি দিলেন। এয়ারপোর্টে পা রেখেই তিনি ত্রিপুরা সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, "বিজেপি ত্রিপুরাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। বিপ্লব দেব ভাবছেন, তাঁর কাছে ভিসা নিয়ে তবেই রাজ্যে পা রাখতে পারবেন বিরোধীরা। যাঁরা বড় বড় ভাষণ দেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন, তাঁদের হাতে ত্রিপুরার গণতন্ত্রের কি অবস্থা, রাজ্যবাসী তো দেখছেন। যাঁরা এঁদের চ্যালেঞ্জ করছে, তাঁদের ধরে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।"
থানাতে পৌঁছানোর সাথে সাথেই বিজেপি কর্মীরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালো পতাকা দেখান। স্লোগান ওঠে গো ব্যাক। অবশ্য পাল্টা স্লোগান জুড়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস। থানাতে ঢুকে খোয়াই থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব সেনগুপ্ত ও ওসি মনোরঞ্জন দেববর্মাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেছেন, "তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ দেখান। আমি এখানে বসে থাকবো। আপনি হয় এদের থানা থেকে জামিন দিন, নয়তো জানান, অভিযোগ কি। বিজেপির কথায় এসব করছেন। আর মাত্র ১৭ মাস বাকি। কেন এখনও দালালি করছেন। সময় থাকতে বিজেপির দালালি ছেড়ে দিন।"
অন্যদিকে গতকাল হামলার সময় মাথা ফেটে গিয়েছিল যুব তৃণমূল নেতা সুদীপ রাহার। তারপর থেকে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। সকাল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করায় জেলবন্দি তিনি। বাকবিতণ্ডার সময় হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে বিজেপি সরকার।" সম্প্রতি ধৃত ১৪ জনকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা পুলিশ। যদিও তৃণমূলের রাজ্যস্তরের যুবনেত্রী জয়া দত্ত বলেন, “আমাদের কোনও দোষ নেই। তাও গ্রেপ্তার করা হল।” এই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার দিল্লিতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসবেন তৃণমূলের রাজ্যসভা ও লোকসভার সাংসদেরা।