করোনা (Corona) সংক্রমনের কারণে গত বছর থেকে দেশজুড়ে বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে দৈনিক সংক্রমণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ১৪ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আংশিকভাবে পুনরায় স্কুল খোলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক সাংবাদিক সম্মেলনে নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পাল জানিয়েছেন, "গোটা দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা ফ্রন্টলাইন কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত না হলেও তাঁদের টিকাকরনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কিছু কিছু রাজ্য স্কুল পুনরায় খোলার চিন্তাভাবনা করছে এবং বাকি শিক্ষকদের দ্রুত টিকা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশের প্রায় ১৫ লাখ স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল খুললেও তা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয়। বর্তমানে ২৫ কোটির বেশি পড়ুয়া অনলাইন শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যাদের অনলাইন শিক্ষা গ্রহণে সামর্থ্য নেই তারা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মোট আটটি রাজ্যের তালিকা দিয়েছে যারা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকেই স্কুল খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। হরিয়ানা নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খুলবে ১৬ জুলাই থেকে। নাগাল্যান্ড একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল খুলবে ২৬ জুলাই থেকে। এছাড়া পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, পুদুচেরি, লাক্ষাদ্বীপ এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সব ক্লাসের জন্য আগস্ট মাসেই স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ১৬ আগস্ট থেকে স্কুল খুলবে।
দিল্লিতে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের চলতি সপ্তাহ থেকে বোর্ড পরীক্ষার জন্য ভর্তি সংক্রান্ত কাজ এবং প্র্যাকটিক্যাল কার্যকলাপের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হবে। তবে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। মহারাষ্ট্র আগামী ১৭ আগস্ট থেকে স্কুল পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চম শ্রেণী থেকে ক্লাস শুরু হবে এবং শহরাঞ্চলে অষ্টম শ্রেণী থেকে ক্লাস শুরু হবে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে চলতি মাসেই ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
তবে বেশিরভাগ রাজ্যে উঁচু ক্লাসের পঠন-পাঠন শুরু করার পরিকল্পনা করা হলেও আইসিএমআর বলেছে যে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে হবে। নাহলে অনেকেই হয়তো কখনও বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করবে না। দীর্ঘদিন বন্ধের পর সরকার বিশেষ উদ্যোগ না নিলে প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী আসবে না। সেইজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং তা না করলে দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে শিশু শ্রমিক। এছাড়া গত সপ্তাহে সংসদীয় কমিটি লক্ষ্য করেন যে স্কুল বন্ধ থাকার জন্য পরিবারের সামাজিক গঠন কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ি থেকে শিশুদের কাজে পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে এবং বাল্যবিবাহের পরিসংখ্যান দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করতে খুব দ্রুত বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।