পর্দার নায়ক থেকে দেশের রাষ্ট্রনায়ক! ভ্লাদিমির জেলেনস্কির জীবন অনুপ্রেরণার আরেক নাম
১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এখনকার বিশ্বের সুপারহিরো জেলেনস্কি
যাঁরা পাঞ্জাবের রাজনীতির দিকে নজর দিয়েছেন, তাঁরা জানেন আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলেন ভগবন্ত মান। এই রাজনৈতিক নেতা আগে একজন কমেডিয়ান ছিলেন। পোশাকি কথায় বলতে গেলে পলিটিক্যাল স্যাটায়ারিস্ট ছিলেন। সেখান থেকে তিনিই আজকে আম আদমি পার্টির সাংসদ ও খুব সম্ভবত পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীও হতে পারেন। এই ভগবন্ত মানের সঙ্গে বিশ্বের আরেক রাষ্ট্রনায়কের খুব মিল রয়েছে। তাঁর গল্পই আজ শোনাবো আজকের এই প্রতিবেদনে।
ভদ্রলোকের নাম বর্তমানে বিশ্বের রাজনৈতিক বিশেষ কারণের জন্য সকলের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উনি হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy)। রাশিয়ান সেনাদের (Russian army) অনুপ্রবেশের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দেশ ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন তিনি। এই মানুষটিই বছর সাতেক আগে মানুষের নজরে এসেছিলেন তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। স্পষ্ট করে বললে, কৌতুক অভিনয়ের (comedian) জন্য তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিলেন ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু কে তখন ভেবেছিল যে এই পর্দার নায়ক বাস্তবের রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠবেন। রাশিয়ান আগ্রাসনের মুখে কার্যত একা দাঁড়িয়ে লড়ছেন বছর ৪৪-এর এই ভদ্রলোক।
অনেকেই জেলেনস্কির তুলনা টানেন প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সঙ্গে। ১৯৮৭ সালে রোনাল্ড রেগান অভিনয় ছেড়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে যান। মোটামুটি জেলেনস্কির জীবনকাহিনীও অনেকটা একই। তবে এই সিনেমার নায়ক কিন্তু বর্তমানে দাঁড়িয়ে বাস্তবের নায়ক হয়ে উঠেছেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিভের মাটিতে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা। কিন্তু ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাননি তো বটেই, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে একাই গড় সামলাচ্ছেন বুক চিতিয়ে।
অভিনেতা থেকে রাষ্ট্রনেতা হয়ে ওঠায় জেলেনস্কির রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। তবে রাশিরায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা এই নেতার সাহসী মনোভাবকে অগ্রাহ্য করতে পারছেন না তাঁর দুঁদে সমালোচকরাও। কয়েক বছর আগে ইউক্রেনের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের নিয়ে কৌতুক করতে একটি টিভি শো চালু করেছিলেন "সার্ভেন্ট অফ পিপল" (Servant of People)। এই শো-টি বিপুল জনপ্রিয় হয় এবং জেলেনস্কির মধ্যে মানুষ নিজের পরবর্তী নেতা দেখতে পান। যথারীতি ২০১৯ সালে নিজের পার্টি কিভারতাল ৯৫ গড়ে সরকার গঠন করেন তিনি।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের ক্রাইভিই রিহ অঞ্চলে ১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন জেলেনস্কি। ভ্লাদিমির আলেকজান্দ্রোভিজ জেলেনস্কির এই ব্যক্তির পুরো নাম। ঘটনাচক্রে, তাঁর বাড়ির আশপাশে রাশিয়াভাষীদের বসতিই বেশি। বাবা ক্রাইভিই রিহ ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স-এ সাইবারনেটিক্স এবং কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের অধ্যাপক। মা ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। জেলেনস্কির ঠাকুরদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সেখান থেকেই বোধ হয় এমন অদম্য মনোভাব পেয়েছেন এই ভদ্রলোক।
জেলেনস্কি প্রচুর সিনেমাতে (movies) অভিনয়ও করেছেন যা দেখলে আপনিও বুঝতে পারবেন ইনি বড় মাপের শিল্পী। এত রঙিন এই মানুষটি আজ ধূসর বর্ণিত ইউক্রেনের শেষ ভরসা। হাওয়ায় গুঞ্জন ভাসছে জেলেন্সকিকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া। তাঁর কাছে পালিয়ে যাবার রাস্তা ছিল কিন্তু তিনি পালননি। জানিয়েছেন তিনি পালাবেনও না, মাটি কামড়ে ইউক্রেনেই (Ukraine) পড়ে থাকবেন। লড়াই করবেন, দরকারে লড়তে লড়তে মৃত্যুবরণ করবেন। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কাছেও সেরকমই আর্জি রেখেছেন তিনি।