লড়াই কেবল মণ্ডপে নয়, টক্কর বুক স্টলেও
পুজো মানেই শারদীয়া সংখ্যা, আড্ডা-গান, সঙ্গে বইপড়া
পুজো এলেই বাঙালি আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকে। রাত জেগে ঠাকুর দেখা, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, সব মিলিয়ে বাঙালির পুজো আনন্দমুখর। আর পুজোর সময় এলেই হাতে আসে নতুন নতুন শারদীয়া সংখ্যা। পছন্দের লেখকদের লেখায় মশগুল থাকে আট থেকে আশি। তাই পুজোর সময়টুকুর জন্য মুখিয়ে থাকেন একটু লক্ষ্মীলাভের আশায় লেখক থেকে প্রকাশক সংস্থা। এবার করোনার বছরেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিংবা ফুটপাথের ধারে বসে 'বুক স্টল'। আর শাসকদল হলেই বড় প্যান্ডেলে খাটিয়ে মূল পুজো প্যান্ডেল লাগোয়া কোন জায়গায় বসে সুদৃশ্য 'বুক স্টল'। ঠাকুর দেখার পাশাপাশি পুস্তক-অনুরাগী পাঠক পথ চলতি স্টল থেকে কিনে ফেলেন পছন্দের রাজনৈতিক বই কিংবা কোন ইতিহাসের দলিল।
২০২১-এর পুজো করোনা কাঁটায় বিদ্ধ। তবে গত বছরের মতো এতটা কঠিন ঘেরাটোপে আবদ্ধ নয়। মানুষ তাই নিজেদের খুশিতে রীতিমত করোনাকে উপেক্ষা করে এই আনন্দ-যজ্ঞে সামিল হয়েছেন। বিভিন্ন প্যান্ডেলে বসেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের 'জাগো বাংলা'র স্টল। বিকোচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিন্ন স্বাদের নানান গ্রন্থ। ভিড় কতটা তা নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে, তবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসেছে এমন সুদৃশ্য স্টল। কেবল শহর কেন? শহর ছাড়িয়ে মফস্বল গুলোতেও বিকোচ্ছে 'দিদির বই'।
অন্যদিকে বাংলার আর একটি দল সিপিএম পুজো-অর্চনায় সামিল না হলেও উৎসবের জোয়ারে গা ভাসান। নীতি-আদর্শ যা-ই থাকুক, অন্তরে তো বাঙালি! তাই পুজোর সময় আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া তো আছেই, সঙ্গে আছে বুক স্টল। আর সেগুলোয় ভিড় চোখে পড়ার মতো। ঠাকুর দেখার পাশাপাশি বাঙালি পাঠক হাত বোলাচ্ছেন 'লাল' মলাটের বইগুলোতে। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের মার্কসকেন্দ্রিক সাহিত্য কিংবা কোন প্রবন্ধের বই। হয়তো হাতে তুলে নিচ্ছেন দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম জমানার উল্লেখযোগ্য সফলতার কোন দলিল।
তর্ক উঠেছে কোনটায় ভিড় বেশি? টক্কর চলছে কাদের মধ্যে? কেউ কেউ বলছেন জাগো বাংলায় ভিড়ের বহর, আবার আর একদল বলছেন সিপিএমের বুক স্টলগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। এর কারণ দেখিয়েছেন, জাগো বাংলায় তো বেশিরভাগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই, কিন্তু সিপিএমের বুক স্টলে ভিন্ন স্বাদের বই পাওয়ার সুযোগ থাকছেই। আর বাঙালি তো বৈচিত্রে বিশ্বাসী। তর্ক-বিতর্ক তো থাকবেই, তবে পুজো মানেই কেবল প্যান্ডেল প্যান্ডেলে ঘোরা নয়, সঙ্গে ভিন্ন স্বাদের পুস্তক-ভ্রমণে মশগুল হয়ে থাকেন বাঙালি। বাঙালির পুজো তাই আড্ডা, গান, খাওয়া, আর সঙ্গে বই পড়া তো আছেই!