'হিন্দুস্তান কখনই পাকিস্তান হবেনা, রক্ষা করবে বাংলাই', ভবানীপুর উপনির্বাচনে কড়া বার্তা মমতার
আজকে ভবানীপুর উপ-নির্বাচনের প্রচার করতে হিন্দিভাষীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভবানীপুর উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজয়ের পরে অবশ্যই তাকে ছয় মাসের মধ্যে কোনো না কোনো একটি কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হতো। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিয়েছেন তার সবথেকে প্রিয় ভবানীপুর কেন্দ্রটিকে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কিন্তু এই আসনে বিধায়ক হিসেবে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালেও যখন সিপিআইএম প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়ে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তখনো তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভবানীপুর কেন্দ্রটিকে।
আর ঠিক ১০ বছর পরেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। তবে এবারে, চিত্রটা কিছুটা আলাদা। এবারে ভবানীপুরের ভোটারদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র কালীঘাটের মেয়ে কিংবা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নন, বরং তিনি সারা বাংলার মেয়েও বটে। তাই প্রচার তো সারতেই হবে। এই কারণেই, বৃহস্পতিবার ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মপুকুরের উত্তম উদ্যানে হিন্দিভাষী ভোটারদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সোমবার একবালপুরের ১৬ আনা মসজিদে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও, মমতার সেই সৌজন্য সাক্ষাতকারটিকে 'তোষণের রাজনীতি' বলে আক্রমণ করেছিল বিজেপি। আজকে হিন্দিভাষী ভোটারদের সঙ্গে বৈঠকে, বিজেপির সেই আক্রমনের পাল্টা তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'আমি মসজিদে গিয়েছিলাম বলে আমাকে কটাক্ষ করছে বিজেপি। আমি মন্দিরে গিয়েছি। গুরুদ্বারায় গিয়েছে। আমি বিজেপির এইরকম কায়দা কানুন পছন্দ করিনা। গুজরাটি হোক কিংবা মাড়োয়ারি, কিংবা আবার বাঙালি আমি কারোর ক্ষতি চাই না। আমি আপনাদের রক্ষা করব। পশ্চিমবঙ্গে যেরকম দুর্গাপূজাতে ছুটি থাকে, সেরকম ভাবেই কিন্তু ছট পুজোতেও ছুটি থাকে। আমি মায়াপুরে জমি দিয়েছি। এবারে সেখানে পর্যটনস্থল হবে। সেখানে মন্দির তৈরি হবে। যে যার ধর্ম পালন করবে। নিজেদের ধর্ম রক্ষা করবে।'
আজকের বৈঠক থেকে সম্প্রীতি এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'গুজরাটি হোক কিংবা রাজস্থানী, উত্তরপ্রদেশ হোক কিংবা বাংলা। সকলের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। আমি যেরকম মুড়ি খাই, তেমনি কিন্তু আমি হালুয়াও খাই। আমি রাজস্থানে গেলে যেমন আজমির শরিফ যাব, তেমনি পুষ্কর মন্দিরেও যাব। ওরা নন্দীগ্রামকে পাকিস্তান বলেছিল। ওরা এবারে ভবানীপুরকেও পাকিস্তান বলছে। এটা আমার দেশ, আমার মাতৃভূমি। অন্য কোন জায়গা কেন হবে? আমি আমার দেশমাতৃকাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি। আমি চাই আপনারা শান্তিতে থাকুন। আপনারা ভাল থাকুন। এই হিন্দুস্তান আরো উন্নতি করবে, এবং আমরা আমাদের লড়াই জারি রাখবো। এটা ভারতের মাটি। এই মাটি রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ এবং কাজী নজরুলের। এটা আমাদের দেশ। আগে দেশ, পরে আমি।'
পাশাপাশি, আজকের মঞ্চ থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্যেও বার্তা দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'বাংলাই হিন্দুস্তানকে রক্ষা করবে। হিন্দুস্তান কখনো পাকিস্তান হবেনা।' তার সাথে সাথেই আজকে নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদি সরকারকে একহাত নিলেন। আজকের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'নোটবন্দির সময় কি হয়েছিল আপনারা কি দেখেছেন? আমি রোজ বড়বাজারে যেতাম। সেখানে গিয়ে আমি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলতাম। তাদের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিল নোট বন্দির সময়ে। ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন।' পাশাপাশি, আজকে ভবানীপুরের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, 'শোভনদা আমাকে ভবানীপুরের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। ঘরে ফিরতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি। ভবানীপুরের মানুষের জন্য আমি কে? আমি তেমন কেউ নই। আমি একজন সাধারন মানুষ, যে শুধুমাত্র ভবানীপুর আসন থেকে বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আমি আপনাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি।'