নিজাম প্যালেসের নাটকীয় মোড়! একনজরে গ্রেপ্তারির খুঁটিনাটি
ধৃত ৪ হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি-র ৭ নং ধারা, ১৩এ এবং ১৩ বি ধারায় জামিন অযোগ্য মামলা দায়ের করা হয়
নারদ মামলার স্টিং অপারেশনের ঘটনায় টানটান উত্তেজনা সকাল থেকে। উধাও কোভিডবিধি, নেই সচেতনতা। সবকিছুর উর্ধ্বে "নিজাম প্যালেস"। কারণ এদিন সিবিআইয়ের তরফে পেশ হয় এই মামলার প্রথম চার্জশিট। আর তাতেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী-সহ চার হেভিওয়েট নেতাকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। এতেই রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ তৃণমূল সমর্থকদের। বিক্ষোভ হয় নিজাম প্যালেসের বাইরেও।
গ্রেফতারির পর আদালতের সিদ্ধান্তেই আস্থা ফিরহাদের
চেতলার নিজাম বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজ্যের পরিবহণ ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। সে সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, "নারদ মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করছে, স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার করছে, কোর্টে দেখে নেব।" এ সময়েই ফিরহাদকে সিবিআই নিয়ে যেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চেতলার তৃণমূল কর্মীরা। সিবিআই আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় জওয়ানদের সাথে বচসা শুরু করে দেন তাঁরা। তবে তাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রুখতে সক্ষম হয়নি কর্মী-সমর্থকেরা।
ফিরহাদ-সুব্রত-মদন-শোভন থাকলেও কেন নেই মুকুল-শুভেন্দু?
সিবিআই দপ্তরে ফিরহাদ হাকিম সহ গ্রেপ্তার করে আনা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। অথচ ছিলেন না মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী। এতে আরও বেশি ক্ষোভে ফেটে পড়েন উত্তাল জনতা। নিজাম প্যালেসের বাইরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। এরপরেই মূল ফটক থেকে গোটা চত্বর মুড়ে ফেলা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিয়ে।
বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই কীভাবে বিধায়ককে গ্রেপ্তার করল সিবিআই? তোপ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শুরু হয় বচসা। প্রথমত, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, এই চার নেতাদের গ্রেপ্তারি আইন অনুমোদন করে না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী কোনও বিধায়ককে গ্রেপ্তার বা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন।
নিজাম প্যালেসে গিয়ে সরাসরি সিবিআই আধিকারিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী
নিজাম প্যালেসে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘আমাকেও গ্রেপ্তার করুন’, সিবিআই দপ্তরে গিয়ে অফিসারদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা। গ্রেপ্তারির খবর পাওয়া মাত্রই নিজাম প্যালেসে যান রত্না চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের কন্যা, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। এরপরই আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি নিজাম প্যালেসের ১৫ তলায় সিবিআই দপ্তরে উঠে যান তিনি। প্রথমে কথা বলেন আইনজীবীদের সঙ্গে। এরপর সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর। দাবি করেন, যেভাবে এই চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বেআইনি।
ফিরহাদ-সুব্রত-মদন-শোভনদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা
এরপরেই ধৃত ৪ হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি-র ৭ নং ধারা, ১৩এ এবং ১৩ বি ধারায় জামিন অযোগ্য মামলা দায়ের করা হয়। ধৃত মন্ত্রী, বিধায়কদের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের অভিযোগে চার্জশিট পেশ করার অনুমোদন পেল ইডি। পাশাপাশি ধৃতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের কাজ শুরু করারও নির্দেশ মেলে।
নিয়মিত সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেওয়া সত্ত্বেও কেন গ্রেপ্তার?
চার্জশিট কেন এতদিন দেওয়া হল না? প্রশ্ন তুললেন সুব্রতবাবুর আইনজীবী। চার্জশিট পেশের সময়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারি অপ্রয়োজনীয়, মত তাঁর।
টাকা নিয়েও কেন শুভেন্দু গ্রেপ্তার হল না? প্রশ্ন তুললেন নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল
‘এতদিন পর বিচার মিলল, আজ আমার সুখের দিন’, প্রতিক্রিয়া দিলেন নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের। শুভেন্দু কেন গ্রেপ্তার হলেন না, এই প্রশ্ন তুললেন তিনি। ম্যাথুর দাবি, মুকুল রায় নাকি তাঁর থেকে কোনও টাকা নেননি।
ফিরহাদ-সুব্রত-মদন-শোভনদের গ্রেপ্তারি পুরোটাই রাজনৈতিক হিংসা, তোপ দাখলেন বিশিষ্টরা
রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়কদের গ্রেপ্তারি নিয়ে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। বললেন, "কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে, কাউকে হবে না – এটা চলতে পারে না।" তৃণমূল বিধায়কদের গ্রেপ্তারি নিয়ে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সরব প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রর ছেলে রোহন। পাশাপাশি মন্ত্রী-বিধায়কদের গ্রেপ্তারির জন্য সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ, আবেদন জানিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের।
রাজভবনে শুরু বিক্ষোভ, নিজাম প্যালেসের বাইরে উত্তাল জনতার ভীড়
যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে আবেদন করেন, "লকডাউনের নিয়ম ভেঙে কেউ কিছু করবেন না। আইনের পথ ধরেই মোকাবিলা করা হবে।" এরপরেই কলকাতা পুলিশের হস্তক্ষেপে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ।
ভার্চুয়ালি মামলার শুনানি
ব্যাংকশাল আদালতে নারদ মামলার শুনানি, নিজাম প্যালেস থেকে চার ধৃতকে হাজির করা হবে ভার্চুয়ালি। তবে আদালতে সশরীরে যাবেন সিবিআই অফিসার, আইনজীবীরা। চারজনের জামিনের আবেদন খারিজের যুক্তি পেশ সিবিআইয়ের। দাবি, জামিন দিলে তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন ধৃতরা। তাই ১৪ দিন জেল হেফাজতের আবেদন। তবে এই আবেদন খারিজ হয়। শুনানি চলাকালীন সিবিআইয়ের এসপি সওয়াল করলে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা।
গ্রেপ্তারি ইস্যুতে তৃণমূলের পাশে সিপিএম
অতিমারীর সময় সিবিআইয়ের এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা চাপা দিতেই এই অভিযান। বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া সিপিএমের।
ছ’ঘণ্টা পর অবশেষে নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজাম প্যালেস থেকে বেরনোর সময়ে বলেন, ”আমি এখন কিছু বলব না। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদালত নেবে।”