'বড় পর্দায় অভিনয় করার আগে, ছবি বানাতে চাই' : উন্মেষ গাঙ্গুলী

সৃজিতা ব্যানার্জী
প্রকাশিত: 17/09/2022   শেষ আপডেট: 19/09/2022 9:32 p.m.
instagram.com/unmesh_ganguly

পুজোয় কি উপহার পেতে চলেছেন বিএমএস-প্রেমীরা, পরিদর্শককে জানান দিলেন উন্মেষ গাঙ্গুলী

ফেসবুকের পেজ থেকে ইউটিউবে রাজত্ব, রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে জীবনের ইচ্ছে, 'বাঁকুড়া মিমস' সফরের নানা ওঠা পড়া নিয়ে পরিদর্শকের সঙ্গে খোলাখুলি আড্ডায় মজলেন 'ঘোতন' উন্মেষ গাঙ্গুলী

১) প্রথমে ফেসবুকের জনপ্রিয় পেজ হিসেবে পরিচিত ছিল 'বাঁকুড়া মিমস', সেই থেকে ইউটিউবে সারা বাংলার প্রিয় হয়ে ওঠা, যাত্রাটা কেমন ছিল?

• বাঁকুড়া মীমস জনপ্রিয় হয়েছিল বলেই কিছুটা কনফিডেন্স পেয়েছিলাম যে আমরা যদি ইউটিউব চ্যানেল খুলি, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব। ভিডিও বানানোয় আমার আগ্রহ ছিল, তারপর আমি আর দাদা স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করি। আমাদের প্রয়াস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটা তো ভালো লাগে, কিন্তু আমার আর দাদার একটা লক্ষ্য থাকে, আমরা ততক্ষণ লিখে যাই যতক্ষণ না আমাদের নিজেদের হাসি পায়। এই জার্নিটা খুব উপভোগ করি। প্রথম থেকে অনেকরকম কনটেন্ট চেষ্টা করেছি, যেমন 'সিনেমাংসের ঝোল' হোক কি 'জয় বাবা ধনঞ্জয়' বা 'মানুষ কি ভাবছে' ইত্যাদি। এছাড়াও ওয়েব সিরিজ বানিয়েছি 'এলে but গেলে না'। আর এর সঙ্গে 'টুকাই', 'ঘোতন' বা 'যদুবাবু' তো আছেনই। বিভিন্ন রকম চরিত্র পোট্রে করতে ভালো লাগে। এই জার্নিটা ভীষণ আনন্দ দেয়।

২) সাধারণত বাঙালি পরিবারে পড়াশুনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই প্রাধান্য পায়, সেখানে ইউটিউবকে নিজের জগৎ বানানো, অনেক পারিবারিক বা সামাজিক বাধা বিপত্তিও এসছে নিশ্চয়ই, কিভাবে অতিক্রম করেছ?

• হ্যাঁ অবশ্যই, আমার নিজের দিদি মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। আমার দাদা ডাক্তার। অবশ্যই পড়াশুনাটা আমার পরিবারে কেন্দ্রে থাকত প্রথম থেকেই। কিন্তু আমি স্নাতক শেষ করার পর বাবা বলেন যে সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতকোত্তর করতে। এটা ঠিকই যে পড়াশুনা করে গেছিলাম, কিন্তু তার সঙ্গেও আমি আমার ইচ্ছেকেও প্রাধান্য দি। যেমন শর্ট ফিল্ম বানানো, এডিট করা ইত্যাদি। পড়াশুনাও সঙ্গে চালিয়ে গেছি বলে অনেক বেশি কিছু শিখেছি। কিন্তু বাড়িতে আমার ইচ্ছেও পড়াশুনার মতই প্রাধান্য পেয়েছে। বাধা সেই অর্থে পরিবার থেকে আসেনি। প্রথমদিন থেকেই পরিবারের প্রত্যেকে আমার সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের জন্যই আমি এত সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে পারি। কিন্তু হ্যাঁ, সামাজিক বাধা অবশ্যই এসছে। কিন্তু আমি মনে করি সেটাও 'পার্ট অফ দা জার্নি'। আমি যে কাজটি করি, সেটি আর পাঁচজন করেন না, তাই এখানে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়। ছোটবেলায় শুট করতে গেলে রাস্তায় অনেক বাধা আসত, সেখানকার মানুষেরা করতে দিতে চাইতেন না। ২০১১ এ একটি শুট করতে গিয়ে, সেখানকার স্থানীয়রা 'ভদ্রলোকের পাড়া'র অজুহাতে শুটিংয়ে বাধ সাধেন। তারপর এমনও হয়েছে, অনেক বান্ধবী বলতেন আমার সঙ্গে অভিনয় করার কথা, কিন্তু শেষে তাঁরা জানাতেন যে বাড়ির নিষেধ রয়েছে। আসলে বাঁকুড়া বেশ এখনও অনেকটাই রক্ষণশীল। তাই তাঁদের পরিবার ভাবতেন যে অভিনয় কোনও সম্মানের কাজ নয়। এমনই অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যে কারণে আমি নারী-কেন্দ্রিক চরিত্র বেশি লিখতে পারিনি।

৩) মা বাবার সমর্থন ছিল? বাড়িতে কে কে আছেন?

•আমরা যৌথ পরিবার। মা-বাবা তো বটেই, আমার জেঠু জেঠিমা আছেন, দাদা দিদি আছেন, সঙ্গে বৌদিও নতুন এসেছেন, আর পাবলো (পোষ্য) তো আছেই। সকলেই ভীষণ উৎসাহ দেন। এইদিক থেকে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি সকলের সমর্থন পেয়ে।

৪) শুধু রোস্টিং নয়, গানেও তুমি মন জয় করো! গানের তালিম কোথা থেকে নেওয়া? বাড়িতে কেউ যুক্ত ছিলেন?

• গানের তালিম আমি কোনওদিনই নিইনি। কিন্তু বাড়িতে গানের আবহ আছে। আমার বাবা গান করেন, জেঠিমা গান করেন, বৌদিও খুব ভালো গান গান। কিন্তু 'শ্বাশুড়ি সং' (Sasoori Song), জনপ্রিয় পাকিস্তানি গান 'পাসুরি'র (Pasoori) প্যারোডি করতে হবে বলেই করা। ছোট থেকে কোনওদিনই গানের প্রতি সেই অর্থে আগ্রহ দেখাইনি।

৫) আমরা জানি 'ঘোতন', 'টুকাই', 'বাবু দিদি' তোমারই নিজের জীবনের থেকে পাওয়া রসদ। এভাবেই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে মজার ছলে তুলে এনে দর্শককে হাসালে, এত স্পোর্টিংলি কিভাবে সামলালে সবটা? পারিবারিক ইমেজ রক্ষার ক্ষেত্রে কিভাবে নজর দিয়েছিলে?

• আমার ভাবনা চিন্তার জগৎকে আমার পরিবার ভীষণ সমাদর করেন। কখনও আমার বলা কথা বা করা কাজ নিয়ে সেই অর্থে তাঁরা ব্যস্ত হন না। ওঁরা জানেন একজন ক্রিয়েটর হিসেবে আমার একটি আলাদা ভাবজগৎ আছে, এবং সেখানে আমার নিজের চিন্তা-চেতনা, মতামত প্রতিষ্ঠা পায়। কখনও আমার কাজ নিয়ে কোথাও দ্বিমত পোষণ হলে বা বিতর্ক সৃষ্টি হলেও আমার পরিবারের কেউ কোনও কৈফিয়ত চান না। এ ব্যাপারে আমার সম্পূর্ন স্বাধীনতা। ওঁরা আমায় বিশ্বাস করেন। বাড়ির সকলেই জানেন যে অনেক সময় চরিত্রগুলির সংলাপ তাঁদের থেকেই রসদ পায়, সেটা ওঁরা প্রত্যেকে খুব উপভোগ করেন।

৬) একই সঙ্গে একাধিক চরিত্র অতি সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা, আর প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত করা! ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল?

• নাহ্, ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি একদমই ঝোঁক ছিল না। আর পাঁচজন স্কুলে পড়াকালীন শিশুর মতই একবার দুবার স্কুলে নাটক করেছি। কিন্তু আমি অনেক বড় হয়ে উপলব্ধি করেছি যে আমার গল্প বলায় আগ্রহ আছে। একটি স্ক্রিপ্ট লিখে, শুট করে, এডিট করে তাকে সঠিক ভাবে রূপ দেওয়ার প্রতি আমার একটা ঝোঁক ছিল। আস্তে আস্তে স্ক্রিপ্ট লেখায় সড়গড় হয়ে উঠেছি। তারপর সহকারী পরিচালকের কাজে হাত লাগিয়েছি। আমি এখনও ছবিই বানাতে চাই, হয়ত পরবর্তীতে করব কখনও, কিন্তু অভিনয়কে বলা যায় সম্প্রতিই আমি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছি। বিশেষ করে 'ঘোতন' সিরিজ শুরু করার সময় আমি বুঝি যে এখানে আমায় নানারকম চরিত্র নিজেকেই আঁকতে হবে, এবং প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। তখন আমি উপলব্ধি করেছি যে আমায় আরও শিখতে হবে, তাই আমি প্রতিনিয়ত শিখে চলেছি সকলের কাছ থেকে। একটু কাজও পাচ্ছি (লাজুক হাসি), মানুষ ভালোবাসছেন, এটা ভেবেই ভালো লাগে।

৭) ইউটিউবার মানেই স্পষ্টবাদী। অন্যায়কে হাসির মোড়কে পরিবেশনা করা। অনেক সময়েই তোমায় রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সরব হতে দেখা যায়, এক্ষেত্রে কোনও বাধা এসেছে?

• হ্যাঁ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আমরা আগে অনেক মিম বানাতাম, অনেকেই মনে করেন তাই এখনও যে আমরা নাকি বাঁদিক ঘেঁষা। কিন্তু আমি পরিষ্কার করতে চাই, আমরা কোনওদিকই ঘেঁষা নই। আজ যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, কাল অন্য কেউ আসবেন। আর ক্ষমতা মানেই তাঁর নেওয়া যেকোনও রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের অনুচিত মনে হলে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরাও তাই করি। কাল অন্য কেউ এলেও আমরা করব। তাই এমন না যে যিনি এখন ক্ষমতায় আছেন তাঁকে আমরা অস্বীকার করছি বলে সরব হই! ভুল, ভুলই, সে ডানদিক করুন আর বাঁদিক, সেই ভুলটুকু নিয়ে শুধু আমরা সরব হই। আর মানুষের ধর্মও এটাই যে কেউ একটি দল সমর্থন করলে তাঁর থেকে কৈফিয়ত নিতে চান যে তাঁরা কেন অন্য দল সমর্থন না করে এই দলকে সমর্থন করেন! এই যেমন আমরা একটি রাজনৈতিক দল নিয়ে কিছুদিন আগে, মজার ছলে ভিডিও তৈরি করি। সেটি আবার অন্য এক বিরোধী দলের পেজ পোস্ট করে বিদ্বেষ ছড়াতে চায়। আমরা সেই নিয়ে স্টেপ নিই এবং সেই পেজ থেকে ভিডিওটি ডিলিট করাই। আমরা কিন্তু বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য সেই ভিডিওটি বানাইনি, আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষকে বিনোদন দেওয়া।

৮)'যদুবাবু' র ভাবনাটা কিভাবে আসে? তোমার জীবনেও কি কোনও 'যদুবাবু' আছেন?

•আমার জীবন বলে শুধু নয়, সকলের জীবনেই 'যদুবাবু'র অস্তিত্ব আছে। জানি না এখন আগের মত আছে কিনা, তবে আমাদের সময় যেরকম ভাবে শিক্ষকরা শাসন করতেন, ঠিক তার চেয়েও বেশি স্নেহ করতেন। এখন যেন ব্যাপারটা অনেকটা তাগিদের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষক-ছাত্রের একে অপরের প্রতি সেই আত্মিক যোগটা এখন অনুভব করি না। মনে হয় যেন সম্পর্কের চেয়েও টাকার হিসেবটা বেশি সক্রিয় হয়েছে। আমার জীবনের যাঁরা 'যদুবাবু' ছিলেন, শুধু পড়াশুনাই নয়, জীবনের সমস্যাতেও তাঁরাই পথ প্রদর্শক হতেন। তাঁদের সকলকে আমি শ্রদ্ধা জানাই, এবং বলতে চাই, প্রত্যেকের জীবনেই যেন এমন এক 'যদুবাবু' বিরাজ করেন।

৯) শুধু রোস্টিং ভিডিওই নয়, বিভিন্ন রকম জঁরের ওয়েব সিরিজও বিএমএসের হাত ধরে দর্শককে মনোরঞ্জন করছে! ইউটিউব থেকে বেরিয়ে, বড় পর্দাতে কাজ করার কথা ভাবছ?

•বড় পর্দায় কাজ করার কথা ভাবছি বলতে, কি কাজ করব সেটা নিয়ে আগে ভাবব। কারণ আমি অভিনেতা হওয়ার চেয়েও আগে সিনেমা বানাতে চাই। হ্যাঁ সুযোগ এলে অবশ্যই অভিনয় করব, কিন্তু তার আগে সিনেমা বানাব।

১০) ঘোতনের জীবনে তো 'বাবু দিদি' এসে গেছে, টুকাইয়ের জীবনে কবে আসবে?

•হ্যাঁ ঘোতনের জীবনে 'বাবু দিদি' এসে গেছে, টুকাইয়ের জীবনে কবে আসবে তার অপেক্ষা আমিও করছি (হেসে)। অবশ্যই ভালো লাগবে যদি টুকাইয়ের জীবনে কেউ আসে।

১১) সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবের বাইরে, ব্যক্তিগতভাবে উন্মেষ কেমন? ছোটবেলার কোনও মজার ঘটনা আছে?

•ছোটবেলার মজার ঘটনা তো অনেক আছে, তবে একটা ঘটনা নিয়ে বলতে চাই। যদিও সেটা মজার চেয়ে বেশি আমায় শিক্ষা দিয়েছিল। ক্লাস টু'তে পড়াকালীন একবার জুতোর ফিতে বাঁধার দৌড়ে নাম দি। খেলাটা ঠিক এরকম ছিল, ছুটে গিয়ে জুতো পরে ফিতে বেঁধে, আবার ছুটে গিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমি তো বেশ উৎসাহ এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নাম দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম যে খুব সহজ ব্যাপার। মা তো রোজই জুতোর ফিতে বেঁধে দেন, আমিও ঠিক বেঁধে এগিয়ে যেতে পারব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমিই সেই জুতোর ফিতে বাঁধতে অসফল হলাম, এবং আর দৌড়ে লক্ষ্যে এগোতে পারলাম না। সকলে লক্ষ্যে পৌঁছলেও আমি পারিনি। আমি আসলে অধিক উৎসাহের বশে নিজেকেও বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে আমি জুতোর ফিতে বাঁধতে আদতে জানিই না। এটা এখন ভাবলে যেমন হাসি পায়, তেমনই এটা আমায় জীবনের একটা বড় শিক্ষা দিয়েছে। যেখানে আমি জুতোর ফিতে বাঁধাই শিখিনি, অথচ প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে দিয়েছি। তখন বুঝেছি যে দেখতে সহজ লাগলেও, সেই বিষয়ে না জেনে প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়া মানে আমার মত শিক্ষা পাওয়াই। যদিও শিক্ষিকারা এবং অবশ্যই আমার মা আমায় স্বান্তনা দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি মন থেকে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু হ্যাঁ, আমি অনেক বড় বয়সে জুতোর ফিতে বাঁধা শিখি, কারণ ছোটবেলায় আবার এটা বুঝে গেছিলাম যে জুতোর ফিতে বাঁধা সহজ নয়, তাই আর চেষ্টা করিনি (হাসি)।

১২) অনেকেই মনে করেন এই প্রজন্মের 'বাংলাটা ঠিক আসে না', ইংরাজীই তাঁদের নিয়ন্ত্রক! সেখানে নিজের অঞ্চলের স্থানীয় ভাষাকে সম্বল করেই হয়ে উঠলে সারা বাংলার মধ্যমণি। মানুষ তোমাদের সঙ্গে আত্মিক হয়েছেন বাঁকুড়ার সংস্কৃতির সঙ্গেও। কিভাবে তৈরি করেছিলে নিজেকে? কখনও ভয় হয়েছিল ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার?

•হ্যাঁ ভয় তো অবশ্যই কাজ করে প্রথম থেকেই, সব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরই কাজ করে ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার, অথবা দর্শকদের কনটেন্ট পছন্দ না হওয়ার। আমারও ভয় করে অবশ্যই, মিথ্যে বলব না। আবার এটাও ঠিক যে আমি আমার অঞ্চলের ভাষার প্রতি ভীষণ কনফিডেন্ট ছিলাম। কারণ আমি জানতাম আমি যখন বাঁকরিতে কথা বলি, বা অন্য কেউ যখন ব্যবহার করেন, তখন আমার নিজেরই শুনতে খুব ভালো লাগে। আমার নিজেরই খুব মজা লাগে, তাই আমি ভাবি, যে ভাষা আমায় আনন্দ দেয়, সে ভাষা অন্য মানুষকেও আনন্দ দেবে। আমার কাছে এই ভাষা এতই ব্যক্তিগত, যে নিজের বৃত্তে থাকলে এই ভাষাতেই আমরা ভাব বিনিময় করতে প্রায় অভ্যস্ত। এমন নয় যে সবসময় বলি, কিন্তু এই ভাষা আমাদের ভেতরে আছে, আমাদের শৈশব জুড়ে আছে। তাই যে ভাষা আমাদের সঙ্গেই আছে, তাকে তো বাইরেও বাদ দেওয়া যায় না। স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে বারবার অনুভব করেছি যে সেখানে আমাদের সাধারণ কথ্য বাংলা ভাষার মধ্যেই বাঁকরিও স্থান পাচ্ছে। যে ভাষা আমাদের আদিম সত্য, যার সঙ্গে শিকড়ের যোগ, তাকে তো বাদ দেওয়া কোনও মতেই যাবে না। তাই স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এটি আমার স্ক্রিপ্টে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর সকল মানুষ যে এই ভাষার মাধুর্যের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছেন, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এবং আনন্দের।

১৩) পুজোর বিশেষ ঘোষণা দেখে মনে হচ্ছে এবার পুজো বিএমএসের সঙ্গে জমে যাবে। কি বার্তা দিতে চাও এই নিয়ে বিএমএস-প্রেমীদের?

•পুজোর বিশেষ ঘোষণা এই যে, পুজোয় যদুবাবুর একটি নতুন ব্যাচ আসছে। যেহেতু পুজো মানেই নতুনের স্বাদ, তাই যদুবাবুও নতুন ব্যাচ শুরু করতে চলেছেন। পুজোয় যেমন নতুন জামা হয়, নতুন প্যান্ডেল হয়, নতুন থিম হয়, সেরকমই যদুবাবুর টিউশনেও এবার নতুনত্ব আসছে। হ্যাঁ এমন নয় যে পুরোনোরা থাকবেন না, কিন্তু সব মিলিয়েই আমরা বিএমএস-প্রেমীদেরও নতুন কিছু উপহার দিতে চাই। আর এটাও বলতে চাই তাঁদের, তোমরা খুব ভালো করে, নিরাপদে পুজো কাটাও। খুব মজা করো, যেটা করতে পুজোর সময় ভালো লাগে, সেটাই করো। জোর করে কিছু করো না। আর পারলে অবসর সময়ে, পরিবারের সঙ্গে আমাদের ভিডিও দেখতেও কিন্তু ভুলোনা।

১৪) ছোটবেলায় কি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে? ইউটিউবার হয়ে প্রথম উপার্জনের টাকায় কি করেছিলে?

•ছোটবেলায় তো মানুষ কত স্বপ্নই দেখে, আমিও দেখতাম ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু সেইমত ট্রেনিং নেওয়া হয়নি পড়াশুনার চাপে। তাই আরকি বড় হয়েও আগ্রহ কমে যায়, তখন ইচ্ছে হত ছবি বানাবো। তারপর তো আস্তে আস্তে ইউটিউবার হয়ে উঠলাম। কিন্তু তবুও স্বপ্ন দেখা শেষ হয়নি। ইউটিউবার হয়ে যখন প্রথম উপার্জন করি, বাড়ির সকলকে সাধ্যমত কিছু কিনে দিয়েছিলাম (হালকা হাসি)।

১৫) তোমার কাছে জীবনের সঙ্গা কি?

•জীবনের সঙ্গা বলতে এখন তো কোনও দার্শনিক কথা মাথায় আসছে না, তবুও বলতে চাই যে জীবন কিন্তু ভীষণ ছোট একটা ব্যাপার। তাই প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর করে বাঁচা উচিত। বাংলাদেশের গায়িকা সায়ানের 'আমি সুন্দর হব, সুন্দর হব, একটু একটু করে' গানটি দিয়ে বলতে চাই, যেভাবেই বাঁচো, যে সবটা সুন্দর করে বাঁচতে হবে। এটাই আমার কাছে জীবনের সঙ্গা।