রাজ্যের দাঁড় ও পাল

কৌস্তভ চ্যাটার্জী
প্রকাশিত: 02/07/2021   শেষ আপডেট: 02/07/2021 12:32 p.m.
-

টুইটারের সাথে যত মিত্রোঁ-তা, তার 'ন্যূনতম' ভগ্নাংশও কি রাজ্যের সাথে হতে পারেনা?

রুটিনমাফিক শিরোনামে আসলে জনতা জনার্দনের কৌতূহলের বিষয় হওয়া স্বাভাবিক। তা আজ একটু কৌতূহল নিবারণ করা যাক। প্রথমেই প্রশ্ন তোলা যাক, উনি কি এমন করেন যাতে বারবার চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন? সাংবিধানিক পদে আসীন থেকে সংবিধানসম্মত কাজ করবেন, এটাই তো কাম্য। কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবেন, ভালো কথা। সবই যখন স্বাভাবিক, তাহলে রঙ চড়াচ্ছে কে? তাহলে কি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে প্রশ্ন তোলার ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা রাজ্য সরকারের গাত্রদাহই বারবার চোখে পড়ছে? ঠিক যেমন চোখে পড়েছে বেশ কিছু টুইট?

এখানেই শুরু যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক চিঠি চালাচালি। ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে শুরু করে পুলিশের ভূমিকা - সবেতেই প্রশ্নচিহ্ন রেখেছেন মনোনীত মাননীয় রাজ্যপাল মহাশয়। এ রাজ্যে নিয়োজিত হওয়ার দু বছরের মধ্যে অতি সক্রিয়ভাবে প্রায় চার হাজার টুইট দেগেছেন রাজ্য সরকারের 'ব্যর্থতা' চিহ্নিত করে। অন্যদিকে রাজ্যও থমকে না থেকে প্রশ্ন তোলে তাঁর পদের অবস্থানের বিষয়ে: প্রশাসনিক না রাজনৈতিক? এখন এই দুইয়ের মাঝে চলে কিছু শাসক-বিরোধী তরজা, কিছু ঘন্টাখানেক সান্ধ্য-শো। কিন্তু কে সঠিক আর কে বেঠিক সেটার সূত্র সমাধান হতে হতে আবার চলে আসে নতুন একটা টুইট।

টুইটের রেশ ধরে বলতে গেলে শুরুতেই বলা যায়, 'ন্যূনতম' ঘটনাকে সর্বাধিক রূপে উপস্থাপিত করতে প্রতিটি ঘটনার সাথে ব্যক্তিগত 'সাংঘাতিক' মতামত সংযোজন এবং 'শুনতে পেলাম' বা 'খবর পাচ্ছি'-দিয়ে শুরু হওয়া বক্তব্যগুলির দ্বারা স্ব-টুইটার টাইমলাইনের সিংহভাগ স্থানপূরণ : এই দুইয়ের খেলায় সত্যিটুকু হাতড়ে পেতে বড়ই বেগ পেতে হয়। প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়া (পড়ুন আক্রমণ করলে প্রতি-আক্রমণ করা) রাজ্য সরকারেরও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে, কিন্তু সেই উত্তরের ভাষাও কি মাচা-সংস্কৃতির সাথে কোনো তফাত রাখবেনা? এখন, সমস্ত অ-বিজেপি রাজ্যগুলির সাথে সেখানকার মনোনীত রাজ্যপালদের সংঘাতের গুচ্ছ গুচ্ছ নিদর্শন তুলে ধরে রাজ্যপালকে প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং রাজনৈতিক কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষক প্রমাণ করতে এবং সর্বোপরি তার পদত্যাগ চাওয়ার দৌড়ে এরাজ্য অনেকটা এগিয়েই থাকে। তাই আবারো প্রশ্ন ওঠে, 'পরিবর্তন'-কামী রাজ্যপাল কি নিরপেক্ষ? আবারও আগের মতোই উত্তরের সুলুক সন্ধান করতে করতে টুইট এসে যায়।

রাজ্য-নাও এর পাল'কে অন্তত তার 'সীমারেখা' মেনে স্ব-ভূমিকা পালন করতেই নির্দেশ দিয়েছে বাবা-র সংবিধান এবং দাঁড় অর্থাৎ প্রধান চালিকাশক্তি মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্য সংক্রান্ত সমস্ত 'সিদ্ধান্ত' নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার কণাভাগও যে রাজ্যপালের কাছে নেই — প্রতিটা বাক্যে 'কনস্টিটিউশন' আওড়েও তা থেকে বিস্মৃত কেমনে! অন্যদিকে রাজ্য-নাওয়ের গতিবিধি সম্পর্কে পালের তোলা সমস্ত প্রশ্নই কি দাঁড়ের চালনাকে বাধাদান করে? সংবিধানের স্বীকৃত ক্ষমতার নিরিখে রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন রাজ্যপাল কিংবা ক্ষমতাসীন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্য, কাঁটা মনে হলেও আইনানুগ উপায়ে কাঁটা উপড়ে ফেলার ক্ষমতা কারো কাছেই নেই। তাই মিনিটে মিনিটে কার কোর্টে কে বল ফেলল, সেই নিয়ে মশলাদার শিরোনাম গিলতে থাকা ছাড়া রাজ্যবাসীর আর কোনো বিকল্প নেই।

দু'পক্ষই, নিজেদের পদ ও তার মর্যাদা সম্পর্কে আরও একটু বোধসম্মত আচরণ করলে আজ সবচেয়ে বেশী 'অপমানিত' কে হচ্ছে তার হিসেবটাও কষে ফেলা যেত। যাই হোক, নির্বাচিত আর মনোনীতের মাঝে এই বিরামহীন দ্বন্দ্ব উপভোগ করতে করতে আসুন পরবর্তী টুইটটি পড়ে ফেলা যাক।