২৫ বছর ধরে সাথ দেওয়া রিক্সাচালকের হাতে ১ কোটি টাকার সম্পত্তি তুলে দিলেন মহিলা
ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার কটকে
বিগত ২৫ বছর ধরে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা যে রিক্সাচালকই (rickshaw-pullar) ছিলেন তাঁর যাতায়াতের মাধ্যম, তাঁর হাতেই নিজের জীবনভর গচ্ছিত সমস্ত সম্পত্তি তুলে দিলেন এক মহিলা। সিনেমাকে হার মানানো সত্যিকারের এই ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার কটকে (cuttak)। রিক্সাচালকের হাতে তুলে দেওয়া সম্পত্তির পরিমাণও নেহাতই কম না। হাজার, লাখ নয়, ১ কোটি (1 crore)!
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মহিলার নাম মিনতি পট্টনায়ক (৬৩)। বাস্তবে বিধবা এই মহিলা কোটি টাকার মালিক না হলেও বিগত ২৫ বছর ধরে তাঁকে বহন করা বছর ৫০-এর রিক্সাচালক বুধা সামালের হাতে তুলে দিয়েছেন কটকের সুতাহাটা লোকালয়ে অবস্থিত তাঁর তিন তলা বাড়ি এবং নিজের সমস্ত গয়নাগাটি। জানা গেছে, তাঁর বাড়ি এবং অলঙ্কারের সর্বমোট মুল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।
তবে হঠাৎ করে এতো দামি উপহার কেনই বা রিক্সাচালকের হাতে তুলে দিলেন মিনতি দেবী? জবাবে জিএম কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর (post-graduate) করা মিনতি পট্টনায়কের জবাব, ‘সেই একমাত্র ব্যক্তি যে সবসময় আবার পরিবারকে সাহায্য করে এসেছে’। তিনি আরও জানান, বয়স ৫০ হওয়া সত্ত্বেও বুধা এবং তাঁর স্ত্রী তাঁকে মা বলে সম্বোধন করেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁকে ঠাকুমা বলে ডাকে। তাঁর কথায়, ‘তাঁর (রিক্সাচালক) সরলতা এবং সাধুতার কাছে এই সম্পত্তি কিছুই নয়’।
গত বছরের জুলাই মাসে ক্যানসারে মারা যান মিনতি দেবীর স্বামী কৃষ্ণ পট্টনায়ক (৬৮)। পেশায় তিনি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এবছরের জানুয়ারি মাসে মেয়ে কমলকে (৩০) হারান তিনি। বুধার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, যখন তাঁর মেয়ে কমল ছোটো ছিল তখন তাঁকে রিক্সা করে স্কুলে দিতে যেতেন বুধা। ধীরে ধীরে দরকারে-প্রয়োজনে বুধাকে ডাকতে থাকেন তাঁরা। এভাবে চলতে চলতে বুধা-রা মিনতি দেবীদের পরিবার হয়ে ওঠেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, বুধা শুধু তাঁদের রিক্সা চালান এই নয়, বুধার স্ত্রীও তাঁদের সমস্ত কাজ করেন, সর্বোপরি মানসিকভাবেও তাঁদের সাহায্য করেন তিনি।
মিনতি দেবীর তিন ভাই এবং এক বোন আছেন। তাহলে বাড়ির রিক্সাচালকের হাতে সমস্ত সম্পত্তি তুলে দেওয়ার আগে তাঁরা বাধা দিলেন না? মিনতি দেবীর উত্তর, ‘প্রথমে বাধা এসেছিল বৈকি? তবে নিজের কথায় অনড় থাকায় সেই বাধা কার্যত ধোপে টিকতে পারেনি। একই কথা শোনা গেছে বুধার মুখেও। তিনি বলেছেন, প্রথমে তিনিও মহিলার সম্পত্তি নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তবে ‘মা’ (মিনতি দেবী) নিজের কথায় এতোটাই অনড় ছিলেন যে তাঁর অন্য কোনও উপায় ছিল না।