Vijay Rupani : কেন ইস্তফা দিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি? গুজরাটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে?
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন বিজয় রুপানি
আজকে হঠাৎ করেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইস্তফা দিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তার ইস্তফা দেওয়ার পরেই হঠাৎ করে দেখা যায় তার গোটা মন্ত্রিসভার তরফ থেকে ইস্তফা দেওয়া হয়। অর্থাৎ বর্তমানে গুজরাটে কোন সরকার নেই, যারা শাসন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কার্যত এক রকম সংকটের মধ্যে পড়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বর্তমানে বিজেপির কাছে তিনটি মাত্র বিকল্প রয়েছে গুজরাটের জন্য। প্রথমটি হলো রাজ্যে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়া। দ্বিতীয় টি হল রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা। তৃতীয়টি হলো নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামি ডিসেম্বর মাসে গুজরাটের নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই হঠাৎ করে নতুন ছন্দ পতন এর ফলে রীতিমতো বিতরকের সম্মুখীন ভারতীয় জনতা পার্টি।
সূত্রের খবর, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রমুখরা বর্তমানে প্রথম দুটি অপশন এর মধ্যে একটি বেছে নিতে চাইছেন। অর্থাৎ হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই হয় গুজরাটি নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন, নতুবা গুজরাটে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে। শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে বিজয় রুপানির উত্তরসূরির খোঁজ চালাতে শুরু করেছে বিজেপি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ইস্তফা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিজয় রুপানি? এই প্রশ্ন বর্তমানে রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে। অনেকেই মনে করছেন, এর মধ্যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে। অনেকের ধারণা, বিজয় রুপানি যেহেতু জৈন সম্প্রদায়ের নেতা, তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিজেপির তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি এই ইস্তফার ব্যাপারে।
অনেকে মনে করছেন গুজরাটে অন্য জনজাতির তুলনায় জৈনদের সংখ্যা অনেকটা কম। এরকম পরিস্থিতিতে, হিন্দুদের পরিবর্তে একজন জৈন সম্প্রদায়ের নেতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সে বিষয়টি অনেকেই হজম করতে পারছেন না। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, গুজরাটে নাকি সাংগঠনিক নেতা হলেও সেভাবে কোনদিন জননেতা হয়ে উঠতে পারেননি বিজয় রুপানি। এই কারণেই অনেকে মনে করছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনো প্রভাবশালী জনগোষ্ঠীর একজন নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিজয় রুপানিকে সরিয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
পাশাপাশি, বিজেপি বর্তমানে আরো একটি সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বর্তমানে বিজেপির ভাবনা, এমন একজন নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যার ব্যক্তিগত কারিশমা রয়েছেন। সাথেই, করোনাভাইরাস এর সময় বিজয় রূপানির কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি গুজরাট হাইকোর্ট আহমেদাবাদের সরকারি হাসপাতালকে নরক এর সঙ্গে তুলনা পর্যন্ত করেছিল বলে জানা যায়। সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই হয়তো বিজয় রুপানিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও বিজয় রুপানি নিজেও বলেছেন, 'বিজেপিতে এই ধরনের পরিবর্তন অস্বাভাবিক কিছু নয়।'
কিন্তু এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হল, গুজরাটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী এবং রুপানির উত্তরসূরী কে হবেন? ইতিমধ্যেই দলের সামর্থ্য বিধায়ক কে নিয়ে আহমেদাবাদে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে চলেছে বিজেপি। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজকের মধ্যেই আহমেদাবাদ পৌঁছে যেতে পারেন বলে খবর। শোনা যাচ্ছে, গুজরাটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে রয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা এবং মন্সুখ মান্ডব্য। এছাড়াও আছেন বিদায়ী কৃষিমন্ত্রী আর সি ফালরু, এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি সিআর পাটিল।
১. নীতিন প্যাটেল -
এতদিন পর্যন্ত গুজরাটের উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেশ ভালোভাবে কাজ করে এসেছেন নীতিন প্যাটেল। গুজরাটে ভারতীয় জনতা পার্টির অত্যন্ত পুরনো নেতাদের মধ্যে একজন হলেন নীতিন প্যাটেল। ১৯৯০ সালে প্রথমবারের জন্য তিনি বিধানসভায় বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপরে তিনি গুজরাটের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, কৃষি, সেচ, অর্থ, জলসম্পদ, নগর উন্নয়ন সহ কিছু দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন।
২. মনসুখ মান্ডব্য -
বর্তমানে মনসুখ মান্ডব্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসাবে কাজ করছেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি গুজরাটের বিধানসভার সদস্য। এছাড়াও, বিজেপির ছাত্র সংসদ এবিভিপি-র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছেন। গুজরাটের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ইনি। এই কারণেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় এনার নাম ও বেশ ওপরের দিকে।
৩. আর সি ফালরু -
ফালরু জামনগর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে বিধানসভায় নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। ফালরু এর আগেও মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এর আগে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, এবং পরিবহন দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন ফালরু।
৪. সি আর পাটিল -
সি আর পাটিল বর্তমানে সুরাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হিসেবে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। শহরের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এবং সুরাট লোকসভা কেন্দ্রের বস্ত্র এবং হিরে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে পাটিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।