কাশী বিশ্বনাথ নাকি জ্ঞানবাপী মসজিদ? উত্তর খুঁজতে সমীক্ষার নির্দেশ আদালতের
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক
বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্কের ঘা শুকাতে না শুকাতেই ভারতবর্ষের রাজনীতিতে আর এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়ে গেল। রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এবারে সেই ধারায় নতুন সংযোজন কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ।
বৃহস্পতিবার কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার অনুমতি দিয়েছে বারাণসীর স্থানীয় আদালত। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) এই সমীক্ষা করবে। তিন দশক ধরে চলা এই বিতর্কিত বিষয়ের উপর আদালতের এই নির্দেশে কার্যত সরকারি শিলমোহর পড়ল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশের মত।
ইতিহাস বলে, ১৬৬৪ সালে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ২ হাজার বছরের পুরাতন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ভেঙে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ১৭৮০ সালে হিন্দু মারাঠা রাণি অহল্যা বাই হোলকার কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ করেন, যদিও মসজিদটি মন্দিরের পাশে থেকে যায়। যদিও জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি এর পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। এই অভিযোগের সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। এতদিন বিষয়টি কানাঘুঁষো থাকলেও বৃহস্পতিবারের আদালতের নির্দেশ এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল বলে সূত্রের খবর। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ একে অপরের কোল ঘেঁষে তৈরি। মাঝে কেবল লোহা ও কাঁটাতারের ব্যবধান। মাঝে রয়েছে জ্ঞানবাপী কুঁয়ো। কয়েক শতক ধরে মন্দির ও মসজিদটি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। আদালতের এই নির্দেশে যে সম্প্রীতির মেরুকরণ হচ্ছে, তা একশ্রেণীর মানুষের মত।
১৯৯১ সালে কেন্দ্রে একটি নতুন আইন বলবৎ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে মন্দির মসজিদ গুলো যে অবস্থানে রয়েছে, তার অবস্থান বদল করা যাবে না। যদিও রামমন্দির সে তালিকায় ছিল না কারণ রামমন্দিরের বিতর্কিত বিষয়টি স্বাধীনতার আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু নতুন করে এই আদালতের নির্দেশে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রামমন্দির আন্দোলনের সময় সঙ্ঘ পরিবার এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলি জানিয়েছিল আরও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তারা আন্দোলন চালাবে। তাই জ্ঞানবাপী মসজিদের এই ঘটনা সেই দিকে মোড় নিচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশের বক্তব্য। সংখ্যালঘুদের একাংশ মনে করছেন কেন্দ্রের মোদী সরকার সামাজিক ও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে, এ যেন তারই প্রতিফলন।