কিছু বই, পত্রপত্রিকা আর একটা ভাঙা ফ্রিজ। এটুকু ঘিরেই মস্ত এক স্বপ্ন বুনে চলেছেন শিক্ষক কালিদাস হালদার, তাঁর স্ত্রী কুমকুম হালদার ও এলাকার মুদি দোকানদার তারাপদ কানহার। তাঁদের স্বপ্ন– বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, বইপ্রেমী সমাজ তৈরি করা। সেই স্বপ্নে সামিল হয়েছেন আরও অনেকে।
দক্ষিণ কলকাতায় পাটুলির সত্যজিৎ রায় পার্কের কাছে তারাপদবাবুর মুদির দোকান। দোকানের সামনে দাঁড় করানো রয়েছে ডালাখোলা একটা ফ্রিজ। অদ্ভূত সেই ফ্রিজ। তাতে সাজানো রয়েছে একশোরও বেশি বই! হ্যাঁ, এটাই মাস্টারমশাইদের স্বপ্নের লাইব্রেরি, যার চুম্বক-টানে প্রতিদিন সকাল-সন্ধেয় ভিড় করে ছোট ছেলেমেয়েরা, এলাকার মানুষজন।
![kolkata street library in a fridge kalidas haldar kumkum haldar Bengali News](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails-big/2021/04/09/photo-uploads/2021/04/09/street-library-kolkata-patuli.jpg)
‘শরীরের জন্য যেমন ব্যায়াম, মনের জন্য তেমন বই পড়া জরুরি'
করোনা অতিমারি ও লকডাউনের ধাক্কায় ক্ষতি হচ্ছে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের। বাধা এসেছে তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক মন নিয়ে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায়। সারাক্ষণ তারা হয় মোবাইল, নয়ত ল্যাপটপে চোখ পেতে বসে আছে। সমস্যাটা ভাবিয়ে তুলেছিল কালিদাসবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে। কী করে তাদের মনের জানলাটা খোলা যায়– ভাবতে ভাবতেই একদিন লাইব্রেরি তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে।
বিয়েতে নেই ‘কন্যা সম্প্রদান' অনুষ্ঠান - সমমর্যাদার ভিত্তিতে একসঙ্গে পথ চলার শপথ বর-কনের
![‘Shubhamastu’ - “let it prosper”]( https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/03/07/1613969159634-shubhamastu2.jpg )
কলকাতার ছেলে, অনেক মুহূর্ত তৈরির স্বপ্ন নিয়ে আজও স্বপ্ন বোনে... হয়তো 'ক্যামেরা ম্যান' রা "ফটোগ্রাফার" আর "শিল্পী" হিসেবে পরিচিত হওয়ার আশায় দিন গোনে... তেমন এক তরুণের কথা আর উত্তরণের বাস্তব চিত্র আজ "পরিদর্শক"এ..
![Proteek Mandal lica]( https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/03/13/78812322_10156439208056637_8792335428335173632_o.jpg )
যেই কথা সেই কাজ। কালিদাসবাবুর নিজের সংগ্রহেই রয়েছে প্রায় ৩০০ বই, পত্র-পত্রিকা। প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে আরও অনেক বই কিনে ফেললেন তিনি। কিন্তু সেগুলো রাখা হবে কোথায়? এগিয়ে আসেন স্থানীয় দোকানদার তারাপদ কানহার। তাঁর দোকানের কাছেই পার্ক, কলেজ আর বাজার। প্রতিদিন অজস্র মানুষ যাতায়াত করেন। লাইব্রেরির জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর কোথায়!
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কুমকুমও। নিজে হাতে বইগুলিতে লেবেল লাগিয়েছেন, ইনডেক্স তৈরি করেছেন তিনি। কালিদাসবাবুর পুত্রও জমানো টাকা তুলে দিয়েছে বাবার হাতে। একটা খারাপ হয়ে যাওয়া ফ্রিজে সুন্দর করে সাজানো আছে ডিকশনারি থেকে শুরু করে বাংলা-ইংরেজি উপন্যাস, ছোটগল্প, পত্রিকার সারি। দোকানের ভিতরে কয়েকটা তাকেও রাখা হয়েছে বই। টাঙানো ব্যানারে লেখা আছে স্লোগান– ‘শরীরের জন্য যেমন ব্যায়াম, মনের জন্য তেমনই বই পড়া জরুরি'। কিন্তু ফ্রিজ কেন? হাসিমুখে মাস্টারমশাইয়ের প্রশ্ন– ‘এর চেয়ে ভালো আর কোন কাজে লাগানো যেত এই ভাঙা ফ্রিজটাকে?'
গুমোট কেটে আসছে তাজা হাওয়া
কালিদাসবাবুদের এই উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে এলাকায়। প্রতিদিন ছেলেমেয়েরা, আশপাশের মানুষজন আসছেন, বই দেওয়া-নেওয়া চলছে। প্রতিটি তাকে রাখা আছে ডায়েরি। যাঁরা বই নিচ্ছেন, নিজেদের নাম, ফোন নম্বর ও বই নেওয়ার তারিখ নিজেরাই লিখে দিচ্ছেন তাতে। বই শুধু ঠিক সময়ে ফেরত আসছে তাই নয়, অনেকেই লাইব্রেরিতে জোগানও দিচ্ছেন বই। এ যে তাঁদের নিজস্ব লাইব্রেরি! লোকজন ভিড় করছেন দোকানে, অথচ সবসময় যে বিক্রিবাটা হচ্ছে তা নয়। এতে কিন্তু বিরক্তি নেই দোকানদার তারাপদবাবুর! বললেন, পড়াশোনার চেয়ে ভাল আর কী আছে! আমি ছোটবেলায় এমন সুযোগ পাইনি। এখন এই কাজে সামিল হতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
![healthy food diet](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/05/23/photo-uploads/brooke-lark-jUPOXXRNdcA-unsplash.jpg)
![Rains বৃষ্টি](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2022/08/20/flood-965092_1280.jpg)
ফেসবুকের মাধ্যমে এই অভিনব লাইব্রেরির কথা ছড়িয়ে গেছে দূর-দূরান্তেও। ফলে এলাকার বাইরেও অনেকেই সাহায্য করতে চেয়ে যোগাযোগ করছেন। কালিদাসবাবুরা এখন অন্যান্য জায়গাতেও এই ধরনের লাইব্রেরি তৈরির কথা ভাবছেন।
![library in a fridge patuli satyajit roy park Bengali News](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails-big/2021/04/09/street-library-kolkata.jpg)
জ্ঞানজগতের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় ছেলেমেয়েদের গুমোট মনে তাজা বাতাস লাগাতে চেয়েছিলেন কালিদাসবাবুরা। সেই স্বপ্ন একটু একটু করে আজ সফলতার পথে। এই অভিনব উদ্যোগ এমন অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিক, এই কামনা।