ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা গ্রাফ, মারণ ভাইরাস প্রাণ কেড়েছে ৭৯৮ চিকিৎসকের, উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা
ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই রাজ্যের ভাঁড়ারে ভ্যাকসিনের ঘাটতি দেখা গিয়েছে
করোনা ভাইরাস (Corona virus) সংক্রমণ গোটা বিশ্বের কাছে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। তবে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন বা কড়া বিধি-নিষেধের ফলে ১০২ দিন পর দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফে বড়সড় পতন দেখা গিয়েছিল। এক ধাক্কায় দৈনিক সংক্রমণ ৩৬ হাজারের গণ্ডি ছুঁয়েছিল। স্বস্তি পেয়েছিল গোটা দেশবাসী। কিন্তু এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হল না। গতকাল শেষ ২৪ ঘন্টায় ফের ঊর্ধ্বমুখী রূপ দেখালো কোভিড সংক্রমণ গ্রাফ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের (Ministry of Health and Family Welfare) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় গোটা দেশজুড়ে ৪৫ হাজার ৯৫১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান তার আগের দিনের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। একদিনে মারণ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৮১৭ জন। দৈনিক মৃত্যুর হার বৃদ্ধি না পাওয়াতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
তবে সার্বিক পরিসংখ্যান বলছে যে গতবছরের তুলনায় এই দ্বিতীয় ঢেউ বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে শুধুমাত্র করোনা দ্বিতীয় ঢেউতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৯৮ জন চিকিৎসক। ডাক্তাররা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোটা দেশজুড়ে করোনা আক্রান্তদের সেবা করার জন্য নিরন্তন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আর এই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অনেক চিকিৎসকের প্রাণ গিয়েছে। বিশেষত চলতি বছরের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন অনেক চিকিৎসক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দিল্লির চিকিৎসকদের। শুধুমাত্র রাজধানী শহরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৮ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার এবং তৃতীয় স্থানে উত্তরপ্রদেশ। বিহারে করোনার বলি ১১৫ জন ও উত্তরপ্রদেশে করোনার বলি ৭৯ জন।
এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মাঝেই গোটা দেশকে সুস্থ করার জন্য জোরকদমে চলছে টিকাকরন প্রক্রিয়া। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে টিকাকরণ চললেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভ্যাকসিনের ভাঁড়ার তলানিতে। রেজিস্টার করার পরেও টিকা নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ভ্যাকসিন। গতকাল অব্দি রাজ্যের ২৭ টি স্বাস্থ্য জেলার ভাঁড়ার মিলিয়ে মোট ৬ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন রয়েছে। উত্তর কলকাতা দপ্তরে নিজস্ব সেন্ট্রাল স্টোরে রয়েছে মাত্র ৬ হাজার ডোজ। এই পরিসংখ্যান দেখে মাথায় হাত পড়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। আগামী কয়েকদিনে কেন্দ্র ঠিকানা পাঠালে রাজ্যে টিকাকরণ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, "আগে তবু কিছু বেশি ডোজ টিকা আসছিল। কিন্তু ক্রমশ তার সংখ্যা কমছে। উল্টোদিকে রাজ্যে চাহিদা আকাশছোঁয়া। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় টিকা নেয়ার জন্য লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে।" আবার অনেকের সময় হয়ে গেলেও তারা দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। তাই সেই সমস্যার সুরাহা করতে স্বাস্থ্য দপ্তর জুলাই মাস থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে যে এবার রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে তার ৫০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকদের জন্য তুলে রাখা হবে।