ইউক্রেনে ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত ইতিমধ্যেই সামরিক সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। বহু চেষ্টা করেও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এড়ানো যায়নি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ঘোষণা করেছে রাশিয়া। পূর্ব ইউক্রেনের ক্রিমিয়া থেকে ইউক্রেনের প্রবেশ করেছে রাশিয়ার সেনা। অন্যদিকে রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ-সহ একাধিক শহরে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও বিদেশি শক্তি যদি ইউক্রেনের সাহায্য করতে আসে তাহলে তাদেরকে ফল ভুগতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন পুতিন। ইতিমধ্যেই ইউক্রেন সীমান্তে এয়ারস্পেস বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। একইরকম ভাবে সমস্ত রকম সম্পর্ক রাশিয়ার সঙ্গে ছিন্ন করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আমেরিকা। বিনা প্ররোচনায় এইভাবে অযৌক্তিক আক্রমণের বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অন্যদিকে একই সঙ্গে ইউক্রেনের ১১টি শহরে আক্রমণ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে ব্যালেস্টিক এবং ক্রুজ মিসাইল দ্বারা হামলা করা হয়েছে। রাশিয়ার এই হামলায় ইউক্রেনের নৌসেনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ইউক্রেন সরকারের তরফ থেকে। ইউক্রেনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মিসাইল এবং রকেট হামলার কারণে ইউক্রেনের সেনা কমান্ডের পোস্ট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এর নিন্দা করেছেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ। এই হামলাকে অহেতুক আখ্যা দিয়ে তার বক্তব্য, এর ফলে অসংখ্য মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। কিয়েভ থেকে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানকেও ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস বলছেন, তারা নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পেশ করবেন। যদিও ইউক্রেন সেনা দাবি করেছে, লুহানস্ক এলাকায় পাঁচটি রুশ যুদ্ধবিমান এবং একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস করতে পেরেছে তারা।
তবে রাশিয়ার পাশে রয়েছে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ। রাশিয়ার সেনার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ইউক্রেনে ন্যাশনাল গার্ড এর প্রধান কার্যালয় ধ্বংস করেছে এবং এতে ইউক্রেন সেনার অনেকেই হতাহত হয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার হামলার পর বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন, ইংল্যান্ড এবং তাদের সহযোগী দেশগুলি হামলার সমোচিত জবাব দেবে। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার আক্রমণ ইউক্রেনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং জখম হয়েছেন ৯ জন। রাশিয়ার স্থলবাহিনী এবং বায়ু সেনা একসাথে হামলা করতে ঢুকে পড়েছে ইউক্রেনে।
ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাকর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ থামানোর জন্য ফ্রান্স তার সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। তিনি ট্যুইট করে জানিয়েছেন, রাশিয়ার অবিলম্বে সেনা অভিযান বন্ধ করা উচিত। বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বিতরকের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। চতুর্দিক থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালালেও এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপের আর্জি রেখেছিল ইউক্রেন। তারই মধ্যে সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য জোর দিয়েছে জার্মানি। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলাকালীন সময় আকাশসীমা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মলদোভা। জার্মান চ্যান্সেলর স্কলতজ বলছেন, সম্পূর্ণ ইউরোপের শান্তি নষ্ট করেছেন একমাত্র ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে তারই মধ্যে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। তাদের দাবি নিরাপত্তা বিষয়ে রাশিয়ার দুশ্চিন্তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। তাই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মস্কোর পক্ষে থাকার বার্তা দিয়েছে চীন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একযোগে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো প্রস্তুতি চলছে। ইউক্রেনের থেকে কোন ভাবেই পশ্চিমে বিশ্ব মুখ ফিরিয়ে থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ফ্রান্স থেকে শুরু করে ইতালি প্রত্যেক দেশের প্রধানরা দাবি জানাচ্ছেন যেন অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করুক রাশিয়া। ইউক্রেনের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ন্যাটো। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে রাশিয়াকে এর কড়া মূল্য চোকাতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ন্যাটো। অন্যদিকে, রাস্তায় যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন যাতে না করা হয় তার জন্য রুশ নাগরিকদের সতর্ক করেছে রাশিয়ার সরকার। বরিস জনসনের ঘোষণা, ভাদিমির পুতিন একজন স্বৈরাচারী শাসক।
এই পরিস্থিতিতেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইউক্রেনের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে দিল্লি। হাঙ্গেরিতে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে তারা। ইতিমধ্যেই ভারতীয়দের উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। ইউক্রেন সংলগ্ণ হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া এবং রোমানিয়া সীমান্তে ভারতীয় আধিকারিকদের পাঠানো হচ্ছে যাতে সহজে উদ্ধার কার্য সম্পন্ন হয়। কিয়েভ শহরজুড়ে কার্ফু জারি করা হয়েছে ইউক্রেন সরকারের তরফ থেকে। চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রস। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি দাবি করছেন, 'রাশিয়া বাহিনী চেরনোবিল দখল নিতে চাইছে। ১৯৮৬ এর পরিস্থিতি যাতে আবারো না হয়, তার জন্য আমাদের সেনারা জান লড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয় গোটা ইউরোপের বিরুদ্ধে এটা যুদ্ধ।'
অন্যদিকে, ভ্লাদিমির পুতিন সাফাই দিয়েছেন, ইউক্রেনকে আক্রমণ করা ছাড়া রাশিয়ার কাছে কোনো উপায় ছিল না। সেনা অভিযানের ঘোষণার পর জানিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তার মধ্যে সবথেকে জোরালোতম বিষয়টি হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে হয়েছে কথোপকথন। চেরনোবিল ইতিমধ্যেই দখল করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে রাশিয়া। তবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করে দিয়েছেন, রাশিয়ায় পণ্য রফতানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে চলেছে আমেরিকা।
আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করার অপরাধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা লাগু করবে আমেরিকা। যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছেন পুতিন, তাই রাশিয়ার সমস্ত ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। রাশিয়ার সমস্ত ব্যাংকের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে আমেরিকার তরফ থেকে। আগামীকাল ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির বৈঠকে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে এখন আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো রকম কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। আমেরিকার তরফ থেকে এই মর্মে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।