যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথাকথিত নিম্নবিত্ত মানুষেরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে অক্ষম তাদের জন্য RBI চালু করল এমন একটি UPI ব্যবস্থা যা দেশের খুচরো পেমেন্টের সিস্টেমকে আরও সুগঠিত করবে, এর পাশাপাশি বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ককে আরও সুসংহত করবে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক গৃহীত UPI ১২৩Pay নামক এই নতুন পরিষেবা, ফিচার ফোন অর্থাৎ কিপ্যাড ফোন ব্যবহারকারীদের তাৎক্ষণিক ডিজিটাল পেমেন্ট করার অনুমতি দেবে।
এপ্রসঙ্গে রিজার্ভ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর টি রবি শঙ্কর জানাচ্ছেন, তিনি নিশ্চিত যে ফিচার ফোনগুলির জন্য ইউপিআই কার্যতই বিপ্লব আনতে চলেছে। এবিষয়ে রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেন, "আমি এমন একটি দিন দেখতে পাচ্ছি যখন আমরা অনেক দূরে থেকেও UPI য়ের মাধ্যমে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন করতে পারব।" তার সংযোজন, "UPI ১২৩ Pay চালু করার সাথে এটি UPI-এর অধীনে সুবিধাগুলিকে এখন সমাজের সেই অংশের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে যা এতদিন ডিজিটাল পেমেন্ট ল্যান্ডস্কেপ থেকে বাদ ছিল।”
সাধারণত অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষ যারা স্মার্টফোনের সামর্থ্য রাখে না তারা এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। রিজার্ভ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর রবিশঙ্কর বলছেন, ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার হওয়া সত্ত্বেও, ডিজিটালাইজেশনের একটি বড় অংশ স্মার্টফোনের মালিক লোকেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হচ্ছে। তার বক্তব্য, "প্রায় ৪০ কোটি ফিচার ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে, তাদের জন্য সুযোগসুবিধা যথেষ্ট সীমিত। উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য আমাদের অফলাইনে এবং ফিচার ফোনে UPI উপলব্ধ করতে হবে।"
প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরের আর্থিক নীতির সভায় ফিচার ফোনের জন্য UPI বিষয়ে ঘোষণা করেছিল রিজার্ভ ব্যাংক। আর আজ তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। ফিচার ফোনের জন্য UPI চালু করার পাশাপাশি, সমস্ত ভারতীয় ভাষায় উপলব্ধ করার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য একটি চব্বিশ ঘণ্টার হেল্পলাইনও চালু করেছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে UPI চালু হওয়ার পর থেকে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ৪৫৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে দেশে। কেবল এই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মোট ৮.২৬ লক্ষ কোটি টাকা রফা হয়েছে যা আগের বছরের লেনদেনের কার্যত দ্বিগুণ।
রিজার্ভ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, NPCI এর মাধ্যমে, ফিচার ফোন ব্যবহারকারীরা চারটি উপায়ে অর্থপ্রদান করতে সক্ষম হবেন
IVR সিস্টেম বা ভয়েস ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে:
এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা NPCI দ্বারা প্রদত্ত নম্বরে কল করে লেনদেন করতে পারবেন। এবং এটি একটি সুরক্ষিত মাধ্যম।
অ্যাপ-ভিত্তিক চ্যানেলের মাধ্যমে:
এক্ষেত্রে ফিচার ফোনে একটি অ্যাপের কার্যকারিতা দেওয়া হবে। স্মার্টফোনে UPI অ্যাপে উপলব্ধ সমস্ত লেনদেন স্ক্যান এবং অর্থ প্রদানের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত থাকবে। RBI ইতিমধ্যেই স্ক্যান এবং পে বৈশিষ্ট্য উপলব্ধ করার জন্য কাজ শুরু করে ফেলেছে।
প্রক্সিমিটি সাউন্ড ভিত্তিক পেমেন্টের মাধ্যমে:
এক্ষেত্রে যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিং সক্ষম করতে এবং যোগাযোগহীন অর্থপ্রদান করতে প্রক্সিমিটি সেন্সরের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেন করা হবে।
মিসড কল ভিত্তিক সিস্টেমের সাহায্যে:
এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রথমে একটি টোলফ্রি নম্বরে একটি মিসড কল করবেন, বিপরীতে একটি কল ফেরত পাবেন৷ এরপর একটি UPI পিন ইনপুট করে অর্থপ্রদান করতে সক্ষম হবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে যে দেশে ফিচার ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট ছিল না তা কিন্তু নয়। তবে USSD ভিত্তিক হওয়ায় তা খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস (USSD) ডেটা ভিত্তিক পরিষেবার অর্থ হল ব্যবহারকারীরা *৯৯# কোডের মাধ্যমে স্মার্টফোন ছাড়া বা ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই মোবাইল ব্যাঙ্কিং ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল, এটির চার্জ ফি ও বেশি এবং প্রতিটি টেলিকম অপারেটর এই সুবিধা প্রদান করে না। তবে আশা করা যাচ্ছে আসন্ন ফিচার ফোনে UPI দেশের নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে আসবে।