শেষবার বড়-মঞ্চে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। সেখানে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতকে হারিয়ে উইনারের ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন, রস টেলররা। এখন চলছে টি-২০ বিশ্বকাপ। টি-২০র মঞ্চে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। আর তাতেও আরও একবারের জন্য মুখোমুখি দুই দল। তবে এবারে তাঁদের কারোর অবস্থাই ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের’ দলগুলির মতো নয়। বিশেষ করে ‘মণিমাণিক্য খচিত’ ভারতীয় দল, যাদের এবারের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে ভেবে নিয়েছেন অনেকে, তাঁরা বিশ্বকাপের মঞ্চে এখনও পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলের খাতা খুলতে পারেননি। একই অবস্থা নিউজিল্যান্ডেরও। দুজনেরই সেমিফাইনালে যাওয়া অনিশ্চিত। তাই দুই দলের সম্মুখসমর যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজনাপূর্ণ হতে চলেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বিশ্বকাপের মঞ্চে অন্যতম ফেভারিট হিসাবে মনে করা হচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলকে। বিরাটদের প্রথম ম্যাচ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্ধি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সহজ প্রতিপক্ষ ভেবে ম্যাচের আগেই জয়ের উল্লাসে ভেসেছিলেন অনেক ভারতীয়। চারদিকে বাজছিল ‘মওকা মওকা’। তবে বাস্তবের মাটিতে যখন পাকিস্তানের মুখোমুখি হল ভারত, দেখা গেল রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফের ফারাকটা বিস্তর। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা কোনোদিনও হয়নি, সেটাই হল এবার। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান ভারতকে শুধু হারালই না, ব্যাটে বলে একেবারে দুরমুশ করল ‘খেলার আগেই জিতে গেছি’ মার্কা ইগোকে।
গ্রুপ-বি তে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, নামিবিয়া এবং স্কটল্যান্ডের সাথে রয়েছে ভারত। পয়েন্ট টেবিলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তিনটি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ৬ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে গ্রুপ টপার তারা। সেই সাথে সেমিফাইনালের দরজা প্রায় খুলেই গেছে বাবর-শাহিনদের জন্য। অন্যদিকে ২ ম্যাচ খেলে একটিতে জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। ১ টি ম্যাচ থেকে ১ টিতেই জয় পেয়েছে নামিবিয়াও। তবে স্কটল্যান্ডকে বিপুল রানে হারানোর সুবাদে পয়েন্ট টেবিলে ২ নম্বরে আফগানিস্তান। অন্যদিকে গ্রুপের সবচেয়ে বড় দুই দল, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড, এখনও পর্যন্ত একটি করে ম্যাচ খেলেছে। কেউই প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি। তবে নেট রান রেটে ভারতের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। সে কারনে টেবিলে তিন নম্বরে রয়েছেন কেন উইলিয়ামসনরা। অন্যদিকে বিরাট-রোহিতরা রয়েছেন টেবিলের চতুর্থ নম্বরে। ২টির মধ্যে দু’টিতেই হেরে রেস থেকে একপ্রকার ছিটকে গেছে স্কটল্যান্ড। ফলে আজকের ম্যাচটি নিউজিল্যান্ড এবং ভারত, দুজনেরই টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ। যে জিতবে তারই আশা থাকবে সেমিফাইনালে ওঠার। যে হারবে, তার আশা কার্যত শেষ।
তাই আজকের ম্যাচে প্রাণপণ শক্তি দিয়ে যে ঝাঁপাবে দুই দলই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দু দিকেই রয়েছেন একের পর এক রথী-মহারথী। এমনিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রোহিত শর্মার পরিসংখ্যান যথেষ্ট ঈর্ষনীয়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯ টি টি-২০ ম্যাচে বল করে ১০ টি উইকেট পেয়েছেন যশপ্রীত বুমরাহও। অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধেও টি-২০ ম্যাচে ১২ টি ম্যাচ খেলে ১৭ টি উইকেট তুলে নেওয়ার রেকর্ড আছে নিউজিল্যান্ডের বোলার ইশ সোধিরও।
প্রথম ম্যাচে হার হলেও ভারত এখনও খেলবে আরও চারটি দলের বিরুদ্ধে। আর এই চারটি ম্যাচে ভালো প্রদর্শন করলে পাকিস্তানের সাথে সাথে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠে যাবেন বিরাটরাও। হার-জিত খেলারই অঙ্গ। তাই বিরাটদের এখন একমাত্র লক্ষ্য, পুরনো অতীতকে আঁকড়ে বসে না থেকে ভবিষ্যতের জন্য খেলা। নতুন ভাবে, নতুন রূপে টুর্নামেন্টে ফিরে আসা। আর সে দিকেই চেয়ে বসে আসেন দেশের সোয়া কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। যাতে আবার পুরনো ছন্দে মাঠে নেমে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন রোহিত, বিরাট, পান্থ। যাতে বল হাতে আবার কামাল দেখান বুমরাহ, শামি। ‘একটা ম্যাচে হার কখনও টুর্নামেন্টে একটা গোটা দলের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না’ - এই মন্ত্র মাথায় গেঁথে নিয়েই আজ মাঠে নামুক ‘মেন ইন ব্লুজ’।