তাঁর রাত নামত থিয়েটারের (Theater) মিটমিটে আলোয়, দর্শকদের হাততালিতে। শহরের থিয়েটার হল গুলিতে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। সে এখন এক অনলাইনে খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থার (Food Delivery) কর্মী।
ছেলে হলে কথা ছিল, মেয়ে হয়ে রাতের বেলা খাবার ডেলিভারি? এ-ও আবার হয় নাকি? মাথায় লাল হেলমেট চাপিয়ে সমাজের 'লাল' চোখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সহজ, নিরাপদ জীবনকে উপেক্ষা করে এমন পেশা বেছে নেওয়া আমাদের 'রক্ষণশীল' সমাজ মেনে নেবে কি?
হ্যাঁ, সমাজের কালো চোখে ঠুলি পরিয়ে রাতারাতি ভাইরাল 'জুমাটো গার্ল' সঙ্গীতা। প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন আশুতোষ কলেজে, ইংলিশ অনার্স নিয়ে। ভালো লাগেনি। মন পড়ে থাকত থিয়েটারের এক চিলতে ছোট্ট মঞ্চটার দিকে। ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যবিভাগে। কাজ এবং বিষয় মিলে যেতেই খুশির শেষ নেই সঙ্গীতার। একদিকে মঞ্চ নাটক, অভিনয় চলছে, অপর দিকে সেসব বিষয় নিয়ে চলছে পড়াশোনা। সবই চলছিল নিজের ইচ্ছেমতো। তাহলে হঠাৎ খাদ্য সরবরাহের পেশায় কেন?
কোভিড পরিস্থিতি সঙ্গীতার জীবনে নিয়ে এল এক চরম হতাশার জীবন। গৃহবন্দি জীবন তাঁকে ক্রমশ উদভ্রান্ত করে তুলল। গতির জীবন, অনির্দেশ্যের জীবন খুঁজতে গিয়ে করোনা তাঁকে ঘরবন্দি করে দিল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই। একদিকে কাজ নেই, অন্য দিকে থিয়েটারের অপরাপর কর্মীদের আর্থিক দুর্দশা - সঙ্গীতাকে চঞ্চল করে তুলল। অবশেষে সঙ্গীতা সিদ্ধান্ত নিল 'ডেলিভারি বয়'-এর কাজ নেবে। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে তো 'গার্ল'! আমাদের 'এলিট' সমাজ তো আজও ডেলিভারি গার্ল শব্দটায় নাক উঁচু করে! শুধু সমাজ নয়, যৌথ পরিবারেও আছে এ নিয়ে নানান বিধি-নিষেধ। সব কিছুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলেন সঙ্গীতা।
কেন থিয়েটার থেকে এ পেশায় এলেন সঙ্গীতা? তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সঙ্গীতা নিজেই বলছেন, "হ্যাঁ, আমি Zomato delivery -এর কাজ করছি। আর সেই কাজে আমি গর্ব বোধ করি। So called elite socity -তে যাঁদের আমাকে নিয়ে সমস্যা, যাঁরা সর্বক্ষণ আমায় দেখলেই বলছেন 'এত পড়াশোনা করে Zomato?' তোর তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই, তবে কেনো? ওই হবে নাটক আর zomato' তাঁদেরকে বলছি, থিয়েটার করি তো তাই, থিয়েটার থেকে যে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি সেটাই বলছি... আমার কাছে লোক না ঠকিয়ে যে পেশায় অর্থ উপার্জন করা যায় সেটাই সম্মানের। আর হ্যাঁ, আমরা খাবার ডেলিভারি করি, আন্ডার টেবিল টাকা নয়।"
এই ফুড ডেলিভারির টাকায় কী করছেন সঙ্গীতা? সেখানেও সঙ্গীতা নজির সৃষ্টি করেছেন। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আর্থিক সাহায্য তুলে দিচ্ছেন, নিজের হাত খরচের সামান্য অংশটুকু রেখে। সমাজ যে চোখেই কটাক্ষ করুক, সঙ্গীতার ছকভাঙা জীবনকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।