"একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি/তোমার জন্য গলির কোণে/ভাবি আমার মুখ দেখাব/মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।" কবি শঙ্খ ঘোষ বহুদিন আগে আক্ষেপের সুরে একথা বলেছিলেন।
শহরের যত্রতত্র চোখ যায় কেবল বড়বড় হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানারের ছড়াছড়ি। দু'চোখ মেলে আকাশ দেখার ফুরসতটুকু নেই। পার্ক, ল্যাম্পপোস্ট, বাড়ির ছাদ, ঘরের দেওয়াল, রাস্তার পাশের গাছপালা কোথাও একটুখানি ফাঁকা স্থান থাকে না, যেখানে বিজ্ঞাপনের (Advertisement) প্রচার নেই। পথচলতি মানুষ রাস্তা খুঁজে পায় না বিজ্ঞাপনের বড়বড় হোর্ডিং-এর চাপে। অধিকাংশ বিজ্ঞাপনে ভাষার ব্যবহারে কিংবা বানান সচেতনতার কোন ভ্রূক্ষেপ থাকে না। অবলীলায় কী সরকারি, কী বেসরকারি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ভুল বানানের প্রয়োগ। অশ্লীল ছবি দিয়ে দৃশ্যদূষণ (Visual Pollution) কি হচ্ছে না? সব মিলিয়ে নির্বিকার প্রশাসন। তবে এবার কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে শহরের যত্রতত্র বিজ্ঞাপনের কারণে দৃশ্যদূষণ আটকাতে নয়া বিজ্ঞাপন নীতি আনতে চলেছে পুর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনার পর একটি খসড়া বিলও তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সোমবার পুরসভায় নয়া বিজ্ঞাপন নীতি নিয়ে বৈঠক করেন আধিকারিকরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দায়িত্ব প্রাপ্ত পুর প্রশাসক মণ্ডলী এবং বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই নয়া বিজ্ঞাপন নীতি অনুযায়ী বিজ্ঞাপন সংস্থাকে এই ধরণের বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে। শহরের যত্রতত্র বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে এই নীতি মেনে চলতে হবে। এই খসড়া বিজ্ঞাপন নীতিতে বলা হয়েছে, শহরের যেখানে সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। জলাশয়, উদ্যান, হেরিটেজ বিল্ডিং গুলিতে কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। যেসব এলাকা জনবহুল সেখানে রাস্তার মাঝে কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। বিজ্ঞাপন যদি পরিবেশ-বান্ধব হয়, তাহলে সংস্থাকে পুরসভার তরফে অতিরিক্ত করছাড় দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যারা সৌর আলো ব্যবহার করবে, তাদের বাড়তি করছাড়ের কথা জানিয়েছে পুরসভা।
শহরের যেসব এলাকায় প্রতিদিন বহু মানুষের আনাগোনা থাকে, সেখানে বিজ্ঞাপন ব্যবহারে আরও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। যেসব এলাকায় বিজ্ঞাপন ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ সেখানে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গাছ গুলিতে পেরেক দিতে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হয়। উচ্চ চোখ ধাঁধানো আলোর ব্যবহার করা হয়। এগুলো পরিবেশের ক্ষতি করছে। বিশেষ করে শহরের পাখিদের রাতে স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপনের দাপটে দৃশ্যদূষণের পাশাপাশি সামাজিক দূষণও ঘটছে। নয়া বিজ্ঞাপন নীতি লাগু হলে এই বিজ্ঞাপনের দাপটে কিছুটা রাশ টানা যাবে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।