চিকিৎসা বাবদ অতিরিক্ত বিল করলে জরিমানা দিতে হয় হাসপাতালকে; বেশ অনেকদিন ধরেই চলে আসছে এই নিয়ম। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে সেই জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার নিয়মও এতদিন ধরে চলছে। তবে, আনন্দপুর এর একটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি ঘটনার পর থেকে প্রথমবারের জন্য সে নিয়ম বদলালো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। রোগীর মেয়ের বিয়ে সামনে, তাই রোগীর পরিবারের হাতে অতিরিক্ত বিল করার জরিমানা বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। করোনাভাইরাস পজিটিভ ডালিয়া গোস্বামীর এই ঘটনা অনেক হাসপাতালের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।
২০২১ সালের ১৯ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়ে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ডালিয়া গোস্বামী। সেখানে চিকিৎসা বাবদ সব মিলিয়ে তার বিল হয়েছিল ২৩ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। শুধু মেডিসিন ব্যবহারের খরচ হয়েছিল নাকি ১০ লক্ষ টাকা। আর প্যাথলজিক্যাল টেস্ট বাবদ খরচ হয়েছিল ৪.৫ লক্ষ টাকা। এইটুকু টেস্ট এবং এবং মেডিসিন ব্যবহারের জন্য খরচ এতটা বেশি হয়ে যাওয়ায়, কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ডালিয়া গোস্বামী।
কমিশন চিকিৎসার এহেন বিল দেখে রীতিমতো চমকে যায়। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ইতিমধ্যেই ওই বিল পর্যালোচনা করা হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে। তাতে কমিশনের মনে হয়েছে ৩.৩০ লক্ষ টাকা বেশি বিল করেছে ওই হাসপাতাল। অবিলম্বে সেই টাকা রোগীর পরিবারকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য কমিশনের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি, রোগীর ফুসফুসের অবস্থা যাচাই করার জন্য রেসপিরেটরি প্যাথোজেন প্যানেল টেস্ট বা বায়োফায়ার টেস্ট করা হয়েছিল বলেও খবর। মেডিকেল সাইন্স বলে, এই টেস্ট করাতে হলে আগে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু, হাসপাতালে তরফ থেকে এই অনুমতি পত্রের কোন বালাই করাই হয়নি। রোগীর শরীরের ব্লাড গ্যাস টেস্ট করা হয়েছিল, তাও আবার একবার নয় চার বার।
ডাক্তাররা বলছেন, ডালিয়ার মেডিক্যাল হিস্ট্রি দেখে বোঝা যাচ্ছে এরকম স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একসাথে চার বার এরকম টেস্ট করানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এমনকি এই টেস্ট করা হচ্ছে সেই ব্যাপারে ডালিয়া দেবীকে কোনরকম কথা জানানোর প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেনি হাসপাতাল। যে ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে ডালিয়াদেবী ছিলেন তিনি বলছেন, আইসিইউতে থাকাকালীন সময়ে তার এই সব টেস্ট করানো হয়েছিল। তাই তিনি এই সমস্ত টেস্ট এর ব্যাপারে কিছু জানতেন না। এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই অতিরিক্ত বিল করার রেকর্ড এই প্রথম নয়। এর আগেও চার বার সতর্ক করা হয়েছিল ওই হাসপাতালকে। তার পরেও এই ধরনের বিল করার জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ওই হাসপাতালকে। তবে, ডালিয়াদেবী স্বাস্থ্য কমিশনে জানিয়েছিলেন, মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি, কিন্তু চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার সমস্ত টাকা শেষ। তাই মানবিক দিক থেকে বিচার করে স্বাস্থ্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই টাকা গ্রহণ করবে না, বরং সম্পূর্ণ টাকাটাই ডালিয়াদেবীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য কমিশনের তরফ থেকে।