বহু যুগের পুরোনো এক উপজাতি ভাষা হল সাঁওতালি ভাষা। এই ভাষার লিখিত ইতিহাসের বয়স প্রায় দুশো বছরের কাছাকাছি।২০০৩ সালে সাঁওতালি অষ্টম তফসিলে অন্তভুক্ত হয়। এই ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা এতদিন সাঁওতাল অধ্যুষিত জেলাগুলিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে প্রাথমিক বা উচ্চপ্রাথমিক স্তরেই সাঁওতালি ভাষায় পঠন পাঠন চলত। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ভাষা এতদিন ব্রাত্য ছিল। কলকাতার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ভাষায় পড়াশোনার চল ছিলনা। সম্প্রতি বহু প্রাচীন এই ভাষার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটল আরও এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হল সাঁওতালি ভাষার বিভাগ।
বর্ধমান, বিদ্যাসাগর এবং পুরুলিয়ার সিধু-কানু -বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাষায় পঠনপাঠনের চল ছিল। যাদবপুরের উপাচার্য অনেকদিন ধরেই তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি ভাষার বিভাগ খোলার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে বারবার করা হয় আবেদনও। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনও এবিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসছিল এতদিন। সকলের যৌথ চেষ্টাতেই মিলল সুফল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা অনেক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের মাতৃভাষাতে যেন শিক্ষার অধিকার থাকে। বাংলা বা ইংরাজীর মতো এটাও একটি সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা। তাই এই দাবি যথাযোগ্য বলেই মনে করা হয়েছে। এবং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার সদর্থক অবসান ঘটল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনও সাঁওতালি বিভাগের অধ্যাপক- অধ্যাপিকা রা আসন সংখ্যার ব্যাপারে সবিস্তারে কিছু জানায়নি। জাতীয় স্তরের কিছু পরীক্ষাতেও এই ভাষাতে প্রশ্নপত্র থাকে। এমনকি উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রও সাঁওতালি ভাষায় হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। তবু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ভাষা এতদিন চৌহদ্দির বাইরেই ছিল। দেরি তে হলেও সাঁওতালি ভাষা এবার আশা করা যায় ছড়িয়ে পড়বে নতুন প্রজন্মের কাছে। অনেকদিন ধরে নগর সভ্যতা থেকে ব্রাত্য থেকে এই ভাষা এবার ছড়িয়ে পড়ুক সকলের মধ্যে।